ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাজস্ব সংস্কৃতি বিকাশে বৈশাখী আমেজে এনবিআর

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১৪ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজস্ব সংস্কৃতি বিকাশে বৈশাখী আমেজে এনবিআর

এম এ রহমান মাসুম : খাজনা আদায়ের অভিপ্রায়ে সম্রাট আকবর ভারত উপমহাদেশে প্রথম বাংলা সালের প্রবর্তনের পাশাপাশি বৈশাখের পয়লা তারিখে হালখাতার রীতি প্রচলন করেছিলেন।

কালের ধারাবাহিকতায় সেই ঐতিহ্যকে ধারণ করে  দ্বিতীয় বারের মতো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উদযাপন করতে যাচ্ছে ‘রাজস্ব হালখাতা’। এ যেন রাজস্ব সংস্কৃতিতে বৈশাখী আমেজের নতুন সংযোজন।

এ বৈশাখী রাজস্ব হালখাতার বিশেষত্ব হচ্ছে যেসব করদাতা বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করবে তাদের জন্য ভবিষ্যতে মিলবে ইনসেনটিভ বা বিশেষ প্রণোদনা।

পয়লা বৈশাখ শনিবার সরকারি ছুটির দিন হওয়াতে ২ বৈশাখ রোববার উদযাপিত হবে ওই রাজস্ব হালখাতা। ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বকেয়া করের হিসাব মাথায় রেখে এ বছর হালখাতার আয়োজন করতে যাচ্ছে সংস্থাটি।

‘জ্ঞানভিত্তিক আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ রাজস্ব-সংস্কৃতির বিকাশ’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে এনবিআরের আওতাধীন সব কর ও ভ্যাট অফিসে রাজস্ব হালখাতা একযোগে উদযাপন করা হবে।

প্রতিটি কর অফিসে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে হালখাতা। বকেয়া কর পরিশোধকারীদের প্রণোদনার (ইনসেনটিভ) পাশাপাশি মিষ্টিমুখ করানো হবে। উপহার হিসেবে থাকবে বিখ্যাত লেখকদের বই।

বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্ব সংস্কৃতির আদলে প্রতিটি রাজস্ব অফিসের গেট ও অফিস সজ্জিত করা হবে।

এরই মধ্যে আসন্ন রাজস্ব হালখাতা ও বৈশাখ উৎসব উপলক্ষে করদাতাসহ সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এনডিসি।

করদাতাদের নিকটস্থ আয়কর ও ভ্যাট অফিসে রাজস্ব হালখাতা ও বৈশাখ উৎসবে আমন্ত্রণ জানিয়ে মোশাররফ হোসেন ভূইয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ সকল ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। এসব বিনিয়োগে অর্থায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত রাজস্ব আহরণ। বাংলা নববর্ষে পয়লা বৈশাখ ও হালখাতার আয়োজন আমাদের গর্বিত ঐতিহ্য।

তিনি বলেন, উৎসবের আমেজে বকেয়া রাজস্ব আদায়ের জন্য এনবিআর রোববার ঢাকাসহ সারা দেশের আয়কর ও ভ্যাট অফিসে রাজস্ব হালখাতা ও বৈশাখ উৎসব আয়োজন করছে। বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্ব সংস্কৃতির আদলে অফিস সুসজ্জিত করা হবে। করদাতাদের আপ্যায়নে থাকবে মিষ্টি, মোয়া, মুড়কি, বাতাসা ও স্থানীয় সুস্বাদু খাবার। থাকবে সাংস্কৃতিক আয়োজন। এনবিআর চায় করদাতাদের সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে। সেজন্য রাজস্ব হালখাতায় যেসব করদাতা বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করবে তাদের ভবিষ্যতে ইনসেনটিভ দেওয়ার চিন্তা করছে এনবিআর।



তিনি আরো বলেন, এনবিআরের অধীন সকল আয়কর ও ভ্যাট অফিসে এদিন উৎসবের আমেজে সম্মানিত করদাতাগণের কাছ থেকে বকেয়া রাজস্বের চালান ও পে-অর্ডার গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনী সমিতির সৌজন্যে সুধীজনকে বিখ্যাত লেখকদের বই উপহার প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে। সমাজ যত আলোকিত হয়, কর প্রদানের সংস্কৃতি তত সমৃদ্ধ ও বিকশিত হয়। জ্ঞানভিত্তিক আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে বই শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরো জানান, বর্তমানে বকেয়া করের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অনাদায়ী বিপুল এই রাজস্বের সাথে বিভিন্ন মামলা জড়িয়ে আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগুলো বছরের পর বছর ধরে আনাদায়ী। অনেক করদাতারা কর ফাঁকি দেওয়া ও বিলম্বিত করার সুযোগ খুঁজে। কেউ কেউ আছে ট্যাক্স ধার্য হওয়ায় মামলা করে রাখে।

তাই বর্তমানে যেসব মামলা বিচারধীন আছে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বকেয়া কর পরিশোধের আহ্বান জানান মোশাররফ হোসেন।

২০১৭ সালে প্রথম বছরের মতো বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ‘রাজস্ব হালখাতা’  আয়োজন করে এনবিআর। তৎকালীন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রথমবারের আয়োজিত হালখাতায় আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসে সারা দেশে মোট ৫৬৬ কোটি টাকা বকেয়া রাজস্ব আদায় করে সংস্থাটি। এর মধ্যে আয়কর থেকে ৩০৬ কোটি, কাস্টমস থেকে ২০৭ কোটি এবং মূসক বা ভ্যাট থেকে ৫৩ কোটি টাকা আদায় হয়।

বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্ব সংস্কৃতির আদলে প্রতিটি রাজস্ব অফিসের গেট ও অফিস সজ্জিত করা হয়েছিল। গ্রামবাংলার ঐহিত্য মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কলা গাছ, কুলো, হাতপাখা, মুখোশ, হাতির গেট আর রঙ-বেরঙের কার্টুনে সাজানো হয় এনবিআরের প্রতিটি কর অফিস। করদাতাদের জন্য খোলা হয় হালখাতার ঐহিত্যবাহী নতুন রেজিস্টার খাতা। মাটির সানকিতে দেওয়া হয় মিষ্টি, বাতাসা, নারিকেলের নাড়ু, সন্দেশ, খৈ, কদমা, মুরালি, নিমকী, মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া, তিলের খাজা, সুন্দরী পাকন পিঠা, শাহী পাকন পিঠা, নকশি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, স্পঞ্জ রসগোল্লা, দই, ডাবের পানি, তরমুজ, পেয়ারা, বরই ইত্যাদি।

প্রথমবারের মতো আয়োজিত হালখাতা করদাতাদের কাছ থেকেও পাওয়া যায় অভূতপূর্ব সাড়া। যেজন্য করদাতা বা ব্যবসায়ীরাও রাজস্ব হালখাতাকে স্বাগত জানিয়ে সেবা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ এপ্রিল ২০১৮/এম এ রহমান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়