ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেসরকারি ব্যাংকের আধিপত্য বাড়ছে

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ২৪ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেসরকারি ব্যাংকের আধিপত্য বাড়ছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অর্থায়নে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের আধিপত্য বাড়ছে। ২০১১ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি হয় ৭১ শতাংশ। সে সময় রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে হয় ১৮ শতাংশ। অবশিষ্ট রপ্তানি বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশে। এছাড়া চার কৌশলে অর্থপাচারের ঘটনা ঘটছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অর্থপাচার। এই অর্থপাচারের বড় অংশ হচ্ছে ব্যাংকের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিতে পণ্য ও সেবায় ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিং, আমদানি- রপ্তানিতে বহুমাত্রিক ইনভয়েসিং, পণ্য ও সেবা সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনার অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে শিপমেন্টের ক্ষেত্রেও ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও অর্থপাচার হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অডিটোরিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসে 'ট্রেড সার্ভিসেস অপারেশনস অব ব্যাংকস' শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় উপস্থাপিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ। বিআইবিএমে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিস থেকে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবিরসহ চট্টগ্রামের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যেসব পণ্য আমদানিতে কম শুল্ক দিতে হয়, বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রাংশ, শিল্পের কাচাঁমাল এবং খুচরা যন্ত্রপাতির  ক্ষেত্রে বেশি মূল্য দেখিয়ে অর্থপাচার করা হয়। আবার সরকারি প্রণোদনা পেতে রপ্তানি পণ্যে বেশি মূল্য দেখানো হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের পাওনা পরিশোধে অসামঞ্জস্য রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং শুল্ক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম অর্থপাচার প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে ইউএন কনভেনশন গ্রহণ করা প্রয়োজন ও অর্থপাচার ঠেকাতে এলসি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা জরুরি।

বিআইবিএমের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, অর্থপাচার বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেও অর্থপাচার ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশকেও অর্থপাচারের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে অর্থপাচার কমিয়ে আনতে হবে। তবে টাকা পাচার ঠেকাতে আইন-কানুন এবং বিধির কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু অভাব শুধুই সততা। এ কারণে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

পূবালী ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, এলসি গ্যারান্টি ও ফি কমানোর জন্য বাংলাদেশকে ভিয়েনা কনভেনশনের সদস্য হওয়া উচিত। কেননা, আমাদের বেশিরভাগ রপ্তানি হয় ইউরোপ ও আমেরিকাতে। ভিয়েনা কনভেনশনের সদস্য হলে এসব ফি কমবে এবং এলসির গ্যারান্টি নিশ্চিত হবে। বিশ্বের ৮৯টি দেশ ভিয়েনা কনভেনশনের সদস্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, বিশ্বব্যাপী আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য যেমন বেড়েছে, একে ঘিরে জটিলতা এবং আর্থিক অপরাধও বাড়ছে। যা এখন ব্যাংকিং খাতের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাংকের কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস ভ্যালুশন অ্যান্ড ইন্টারনাল অডিট কমিশনারেটের কমিশনার ড. মঈনুল খান বলেন, অর্থপাচারের ৮০ শতাংশই ট্রেডের মাধ্যমে হচ্ছে। বর্তমানে এটা প্রতিরোধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, অর্থপাচার বন্ধে এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, অর্থপাচারের ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত হয়ে পড়ে। ব্যাংকগুলোকে অর্থপাচারের কৌশল তদারকি করতে হবে। এক্ষেত্রে কাস্টমসের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর সমন্বয় দরকার। ৬৩৪টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে কাস্টমস। এই এসআরও ব্যাংকগুলো সংগ্রহ করতে পারে। তাহলে এলসি করার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, এটি খুবই আশঙ্কার বিষয় যে, ৮০ শতাংশ অর্থপাচারই ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। শুধু অর্থপাচারের ক্ষেত্রে নয়, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো সমস্যায় আছে। এই সমস্যা সমাধানে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আর ঋণের সুদহার কমানোর কথা বলা হচ্ছে। ঋণের সুদহার কমালে আমানতের সুদহারও কমবে। তবে আমানতের সুদহার কখনো মূল্যস্ফীতির নিচে নামানো যাবে না।

সম্প্রতি ব্যাংক মালিকদের নানা দাবি আদায়ের ইস্যু তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যাংক মালিকরা নানা ইস্যু নিয়ে সরকারের কাছে যায়। কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যাপারে তাদের উদ্যোগ কী? খেলাপি ঋণ আদায়ে এবং মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে তারা কি সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছে?

এইচএসবিসি ব্যাংকের কান্ট্রি হেড অব গ্লোবাল ট্রেড অ্যান্ড রিসিভ্যাবলস ফিন্যান্স মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান বলেন, অর্থপাচার রোধে প্রথমেই ব্যাংককেই ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যাংক তার দায়িত্ব পালন করলেই অর্থপাচার কমে আসবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৮/নাসির/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়