ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বড় ঋণে বেশি ঝুঁকছে ব্যাংক

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০১, ৮ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বড় ঋণে বেশি ঝুঁকছে ব্যাংক

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে বড় ঋণের দিকে বেশি ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, মোট ঋণের প্রায় সাড়ে ৫৭ শতাংশ বড় ঋণ।

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৪০ শতাংশ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬৫ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪৭ শতাংশ এবং বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৭৩ শতাংশ বড় ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৫৮ শতাংশ ছিল বড় ঋণ। যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজশাহী অফিসে 'ক্রেডিট অপারেশনস অব ব্যাংকস' শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। স্বাগত বক্তব্যে আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে ঢাকার বিআইবিএমে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। বিআইবিএমের কর্মশালায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজশাহী এবং সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের আঞ্চলিক পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসের অডিটোরিয়ামে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম ফজলুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী অফিসের  দুই মহাব্যবস্থাপক নুরুন নাহার এবং এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। গবেষণাদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মোস্তফা, অতুল চন্দ্র পণ্ডিত, সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা রহমান, প্রভাষক সাদমিনা আমির এবং জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। অনুষ্ঠানের ইন্টারনেট পার্টনার আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড।

কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংক ঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই বিশেষ সজাগ। এর পরও খেলাপী ঋণসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ আর্থিক অনিয়ম বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে খেলাপী ঋণ কমাতে বেশ কয়েকটি পদেক্ষপ নিয়েছে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী বলেন, ক্রেডিট ডিপোজিট রেশিও, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ সীমা এবং বড় ঋণের বিষয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একই সঙ্গে ঋণের গুণগত মান উন্নয়নের বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে।

তিনি বলেন, নৈতিকতা সম্পন্ন লোকের অভাব নেই। কিন্তু তারা যথার্থ মূল্যায়িত হয় না। বরং যারা নৈতিকতার সঙ্গে সমঝোতা করে তারা পেশাগত দিক থেকে এগিয়ে গেছে। যা ব্যাংকিং খাতের জন্য সুখকর নয়।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, গ্রামের মানুষ ঋণ কম পাচ্ছে। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং কম হচ্ছে। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের চিন্তা করতে হবে। কীভাবে সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায়।

পূবালী ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, গ্রাহকদের মানসিকতার পরিবর্তন হলে কোনো ঋণ খেলাপী হবে না। এতে খেলাপী ঋণ অনেকাংশে কমে আসবে। ব্যাংকের ঋণ খেলাপী রেখে বিভিন্ন দেশে অনেকে বিজনেস ক্লাসে ঘুরে বেড়ায়। নির্দিষ্ট এলাকায় ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। আবার একইভাবে নির্দিষ্ট লোককে ঋণ দিচ্ছে। এভাবে বাছবিচারহীন ঋণের কারণে একটি বড় অংশ ঋণ দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, কিছু ধূর্ত লোক তার একই সম্পত্তি বার বার দেখিয়ে ঋণ নেয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বার বার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সিআইবির মতো পর্যায়ে যায়নি। বিষয়টিতে এখন নজর দেওয়ার সময় এসেছে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ঋণ দেওয়ার আগে গ্রাহকদের ৬ মাসের ব্যাংক লেনদেন খতিয়ে দেখতে হবে। খেলাপী ঋণ মনিটরিংয়ে ডাটা ব্যাংক করতে হবে। গৃহ ঋণের বিষয়ে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা আইনজীবীরা জমি সংক্রান্ত অনেক তথ্য দেয়, যা সঠিক নয়। অবশ্যই সরেজমিন পরিদর্শন করে ঋণ দিতে হবে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন, ব্যাংক জনগণের অর্থ অন্যদের ঋণ দেয়। এ কারণে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। ঋণ নিয়ে গ্রাহকরা কারখানা বানালো না দামি পাজেরো জিপ কিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা ব্যাংককে নজরদারি করতে হবে।

এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, সবগুলো ব্যাংক খেলাপী কমানোর চেষ্টা করছে। তবে গুণগত মানের উন্নতি হচ্ছে না। এজন্য ব্যাংক ঋণের বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করতে হবে। ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি বিআইবিএমের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব ঋণ আদায়ে আরো শক্তিশালী আইন প্রণয়ন তার প্রয়োগ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ মে ২০১৮/নাসির/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়