ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সাবধানতা অবলম্বন না করলে তারল্য সংকট বাড়ার আশঙ্কা

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১৫ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাবধানতা অবলম্বন না করলে তারল্য সংকট বাড়ার আশঙ্কা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : ব্যাংকিং ব্যবসায় যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন না করলে তারল্য সংকট আরো বাড়ার আশংঙ্কা রয়েছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘ট্রেজারি অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণের প্রবৃদ্ধি যে হারে বাড়ছে তার চেয়ে অনেক কম হারে বাড়ছে আমানত। ২০১৫ সালের জুনে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৭ শতাংশ আর একই সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ১ শতাংশ, সেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এ অবস্থা চলতে থাকলে তারল্য সংকট আরো বাড়বে।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মো. নেহাল আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। গবেষণাদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের প্রভাষক রিফাত জামান সৌরভ, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিডেটের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব ট্রেজারি মেহেদী জামান এবং ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব ট্রেজারি আরেকুল আরেফিন।

কর্মশালার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংককে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমানে ডলারের দাম একটু ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ ব্যাংক পুরো বিষয়টি নজরদারি করছে, যাতে এটি আর না বাড়ে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিআইবিএমের অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে বর্তমানে অ্যাডভান্সড ডিপোজিট রেশিও (এডি) ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হলে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ হবে।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকাররা ব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদেরকে ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় আরো দক্ষতার পরিচয় না দিলে পুরো ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পূবালী ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, স্বার্থের বাইরে ঋণপত্র খুলে পরবর্তীতে তারা বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলার সংস্থাপনের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ফান্ডের যোগান চায়, এতে বাজারে ডলারের ওপর চাপ পড়ে। এতে ডলারের দাম ঊর্দ্ধমুখী হয়। ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় কর্মরত কর্মীদের ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের সঠিক তথ্য দিতে হবে। এটি না করলে বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নিচে আনতে হবে। বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সঞ্চয়পত্র করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য নিষিদ্ধ থাকা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় ভুল নীতির কারণে ২০০৭ সালে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক। এ কারণে ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় কোনো ভুল করলে চলবে না।

প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় জড়িত ব্যাংকারদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে।

সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ মে ২০১৮/নাসির/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়