ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্বর্ণ আমদানির নীতিমালার নীতিগত অনুমোদন

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২৩ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বর্ণ আমদানির নীতিমালার নীতিগত অনুমোদন

বিশেষ প্রতিবেদক : স্বর্ণ চোরাচালানি রোধ এবং স্বর্ণ আমদানিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মার আবদুল মুহিত।

বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো স্বর্ণ নীতিমালা ছিল না। পরে এ খাতে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। এছাড়া অবৈধভাবে স্বর্ণ দেশে ঢুকছিল। এসব ব্যবস্থা একটি নিয়মের আওতায় আনার জন্য স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হলো। এখন বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি করে এদেশের ব্যবসায়ীরা তার সঙ্গে মূল্য সংযোজন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে।

আমদানিতে কি পরিমাণ ট্যাক্স দিতে হবে-এ বিষয়ে তিনি বলেন, তেমন ট্যাক্স হবে না। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ফি কত হবে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণ আমদানিতে বন্ড সুবিধা থাকছে। আমদানি করে দেশের ভেতর অলংকার বানিয়ে তা বিদেশে রপ্তানি উন্মুক্ত করতে এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের রপ্তানিকারকদের নগদ প্রণোদনা সহায়তাসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমিও বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া অলংকার তৈরি করে যারা দেশের মানুষের কাছে বিক্রি করবে, তারাও আমদানি করা স্বর্ণ ব্যবহার করতে পারবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার সরাসরি স্বর্ণের বার আমদানি করতে পারবে। তবে ডিলার স্বর্ণের বার ছাড়া কোনো স্বর্ণালংকার বা অন্য কোনো ফর্মে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে না। স্বর্ণের বার আমদানির সময় ডিলার বন্ড সুবিধা নিতে পারবে। এসব ডিলার স্বর্ণালংকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে স্বর্ণের বার বিক্রি করবে।

তবে স্বর্ণালংকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া চাহিদার বিপরীতে স্বর্ণের বার আমদানির আগে সম্ভাব্য কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে ওই ব্যয় পরিশোধের বিষয়ে অনাপত্তি নেবে। বৈদেশিক মুদ্রা বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনাপত্তি বিষয়ে অবহিত করবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও স্বর্ণালংকার প্রস্তুতকারীকে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং মূসক (মূল্য সংযোজন কর) নিবন্ধিত হতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণের বার আমদানির সময় বন্ড সুবিধা গ্রহণ করে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে। সেক্ষেত্রে স্বর্ণের বার আমদানি করার নিমিত্ত অনুমোদিত ডিলারকে আবশ্যিকভাবে আমদানি নীতি আদেশ এবং কাস্টমস অ্যাক্টের বিধানাবলি অনুসরণপূর্বক বন্ড লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত বৈধ স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা স্বর্ণালংকার রপ্তানিকারক সনদ নিতে পারবে। বৈধভাবে স্বর্ণালংকার রপ্তানি উৎসাহিত করতে রপ্তানিকারকদের স্বর্ণালংকার তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতসহ বিভিন্ন প্রকারের প্রণোদনামূলক বিশেষ সহায়তা দেওয়া হবে। স্বর্ণালংকার রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমদানি করা স্বর্ণেও ক্ষেত্রে ডিউটি ড্র-ব্যাক ও বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়া হবে।

নীতিমালায় পুরনো স্বর্ণ কেনাবেচায় স্বচ্ছতা আনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, গ্রাহকের কাছ থেকে রিসাইকেল্ড (পুরনো) স্বর্ণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বিধানের লক্ষ্যে উক্ত গ্রাহক/বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্টের কপি এবং পূর্ণাঙ্গ যোগাযোগের ঠিকানা সংরক্ষণ করতে হবে।

নীতিমালায় স্বর্ণের মান নির্ণয়, যাচাই ও নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকার স্বর্ণের জন্য নিজস্ব মান প্রণয়ন করবে। স্বর্ণের মান যাচাই ও বিশুদ্ধ স্বর্ণের পরিমাণ যাচাই নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ল্যাবটেস্ট, ফায়ার টেস্ট বা হলমার্ক টেস্ট সুবিধাসহ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করবে। এই পরীক্ষাগারকে বাংলাদেশের অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাক্রিডিটেশন গ্রহণ করতে হবে। স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারের মান সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হলমার্ক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার কেনাবেচার ক্ষেত্রে হলমার্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম অনুযায়ী স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারে খাদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে দেশের স্বর্ণ খাত সংশ্লিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে বাৎসরিক চাহিদা, আমদানি, রপ্তানি, ক্রয়-বিক্রয়, দোকান সংখ্যা, রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ, বাজেয়াপ্তকৃত স্বর্ণের পরিমাণ, নিলামে স্বর্ণ বিক্রির পরিসংখ্যান ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

দেশে স্বর্ণ চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশে স্বর্ণ আমদানির কোন নীতিমালা আছে কি না-এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের উত্তর পাওয়ার পর তিনি স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ চূড়ান্ত করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মে ২০১৮/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়