ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কোম্পানি আইনের সংস্কার চায় ডিসিসিআই

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ২৪ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোম্পানি আইনের সংস্কার চায় ডিসিসিআই

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন ও উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে কোম্পানি আইনের সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে সংগঠনটি আয়োজিত 'বেসরকারিখাতের উন্নয়নে কোম্পানি আইনের সংস্কার' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান ব্যবসায়ী নেতারা।

গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কোম্পানি আইন প্রণয়ন ও চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে সরকার সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারকে সাথে মতবিনিময় করেছে। আশা প্রকাশ করছি নতুন এ আইনে ব্যবসায়ীদের আশা ও প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ অর্থনীতির সূচকে উল্লেখজনক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে ডুইং বিজনেস ক্যাটাগরিসহ বেশ কিছু সূচকে পিছিয়ে পড়ছে যা কিনা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের সূচকগুলোতে অগ্রগতি অর্জনে একযোগে কাজ করতে হবে এবং ডুইং বিজনেসসহ অন্যান্য সূচকে অগ্রগতি অর্জনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের শাসন ব্যবস্থায় প্রচুর অপ্রয়োজনীয় আইন রয়েছে যেগুলো বাদ দেওয়া প্রয়োজন এবং সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আইনসমূহের সংস্কারে আরো গতি আনার ওপর জোর দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে বেগবান করা এবং নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংস্কার, ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাস, মানবসম্পদ ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে ব্যবসা পরিচালনায় সহজাত পরিবেশ তৈরির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া নতুন ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর জন্য নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত জটিলতা কমানো এবং বিভিন্ন ধরনের ফি/চার্জ কমানোসহ প্রস্তাবিত কোম্পানি আইন বাস্তবায়িত হলে অনেক নতুন কোম্পানি করের নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে এবং সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।

বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, কোম্পানি আইনটি এ উপমহাদেশে প্রথম প্রণয়ন করা হয়েছিল ১৯৩০ সালে, যেটির প্রথম সংস্কার করা হয় ১৯৯৪ সালে এবং ব্যবসায়ী সমাজের প্রয়োজন ও অর্থনীতির সামগ্রিক কল্যাণের লক্ষ্যে বর্তমানে এটির সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

তিনি জানান, এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে মতবিনিময় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। কোম্পানি আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে শেয়ার ট্রান্সফার, করনীতিমালা এবং নিবন্ধন ফি কমানোর বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়াসহ দেশের অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদের  দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তবে এক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাতের অবদান প্রায় ৯৩ শতাংশ এবং আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য নীতিমালার সংস্কার, বাজার সম্প্রসারণ এবং পণ্য বহুমুখীকরণের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, সরকার দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ইতোমধ্যে চামড়া নীতি, কৃষি নীতি, প্লাস্টিক নীতিসহ বেশকিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে এবং সামনের দিনগুলোতে প্রয়োজনীয় আরো বেশকিছু প্রণয়ন করবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র ইকোনোমিস্ট ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, প্রস্তাবিত কোম্পানি আইনের সহজীকরণ একান্ত আবশ্যক এবং ডুইং বিজনেস সূচকে অগ্রগতি লাভ করতে হলে আমাদের কোম্পানি আইনের সহজীকরণের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি উন্নত দেশের উদাহরণকে সামনে রেখে আমাদের কোম্পানি আইনের আধুনিকায়ন একান্ত অপরিহার্য।

আইসিএবি এর প্রাক্তন সভাপতি আদিব এইচ খান বলেন, আরজেএসসি কার্যক্রম পরিচালনায় ইতোমধ্যে বেশকিছু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশে বেসরকারিখাতের জন্য কোনো রেগুলেটর কর্তৃপক্ষ নেই এবং এক্ষেত্রে আরজেএসসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির ইজাজ বিজয় নতুন কোম্পানি নিবন্ধন প্রক্রিয়া যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায় এ বিষয়টি কোম্পানি আইনে আগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার রশনা ইমাম বলেন, ব্যবসাসংক্রান্ত মামলা পরিচালনার জন্য হাইকোর্টে একটি মাত্র বেঞ্চ রয়েছে। যার কারণে এ ধরনের মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় প্রচুর সময় ব্যয় হয়। তিনি ব্যবসায়িক বিরোধ নিরসনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আরজেএসসি’র ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রস্তাবিত কোম্পানি আইনটি মূলত ভারতে ব্যবহৃত আইনের একটি অনুরূপ আইন এবং এটিকে ভারতের অনুকরণে আমাদের দেশে প্রয়োগ করলে তা থেকে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রয়োজনে এবং ব্যবসার পরিবেশ বিবেচনা করে সামগ্রিকভাবে একটি যুগোপযোগী কোম্পানি আইন প্রণয়ন করতে হবে যার মাধ্যম আমাদের অর্থনীতির উন্নতি বিকশিত হবে। 

ডিসিসিআই’র সমন্বয়কারী পরিচালক নূহের লতিফ খান মূল প্রবন্ধ উপস্থানকালে বলেন, কোম্পানি আইনের সংস্কারের বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা লাঘবের জন্য হাইকোর্টে দুই বা ততোধিক অধিক বেঞ্চ গঠনের প্রস্তাবসহ আরজেএসসিকে আরো শক্তিশালীকরণ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের প্রক্রিয়ার ধাপ ও ফি কমানোর প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, ডিসিসিআই সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেন, পরিচালক আন্দালিব হাসান, হোসেন এ সিকদার, ইমরান আহমেদ, খন্দকার রাশেদুল আহসান, মো. আলাউদ্দিন মালিক, সেলিম আকতার খান এবং মহাসচিব এএইচএম রেজাউল কবির প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ মে ২০১৮/নাসির/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়