ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক নিয়ন্ত্রণ উপেক্ষিত

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ৮ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক নিয়ন্ত্রণ উপেক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বে তামাক ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এবারের বাজেটে তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যেসব রাজস্ব প্রস্তাবনা করা হয়েছে সেগুলোর কার্যকারিতা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ।

বাজেট প্রস্তাবনা দেখে মনে হয়েছে, তামাক কর প্রস্তাবনার তামাক কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের বেশ প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে বিড়ির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর রাজস্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হলে সরকারকে তামাক ব্যবসায়ীদের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

শুক্রবার শ্যামলীস্থ ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের সভাকক্ষে আয়োজিত বাজেটে তামাক নিয়ন্ত্রেণের প্রতিক্রিয়ায় বক্তারা একথা বলেন।

বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের প্রধান ইকবাল মাসুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সমন্বয়কারী মোখলেছুর রহমান, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহফিদা দিনা রুবাইয়া, মানসিক স্বাস্থ্য কার্যক্রমের সমন্বয়কারী আমির হোসেন ও নারী মাদকাসক্তি কার্যক্রমের প্রোগ্রাম অফিসার উম্মে জান্নাত প্রমুখ।

এবারের বাজেটে বিদেশি তামাক কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা প্রসারে সুবিধা করে দেবে কারণ দামি সিগারেটের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সাথে সামজ্ঞস্য না রেখে তামাক কর নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বাস্তবিক কোনো প্রভাব পড়বে না।

বিড়ির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর জন্য এর ওপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধির দাবি গত কয়েক বছর ধরে জোরেশোরেই উত্থাপিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে এ বছর বাজেট ঘোষণার আগে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এবং বাজেটবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি ও অর্থমন্ত্রী নিজে ইতিবাচক আশ্বাসও শুনিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে বিড়ি কোম্পানি বন্ধের কথাও শুনিয়েছিলেন। কিন্তু বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়নি।  এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্য রপ্তানি উৎসাহিত করার জন্য ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার জনস্বাস্থ্যবিরোধী পদক্ষেপ বলে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো মনে করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে কম দামে সিগারেট পাওয়া যায় এমন তিনটি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। গত ২০১৬ সালের ৩০-৩১ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকার’স সামিট-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তামাকের ওপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে এ খাতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকপণ্যের ব্যবহার হ্রাস পায়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় বলা যায়, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে এই বাজেট কোনো ভূমিকা রাখবে না। তাই তামাকবিরোধী ও উন্নয়ন সংগঠন হিসেবে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধন ছাড়া পাস না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সব সাংসদকে অনুরোধ জানায়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জুন ২০১৮/ইয়ামিন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়