ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘নিরবিচ্ছিন্ন দেশীয় উৎপাদন পরিবেশ নিশ্চিত করাও প্রয়োজন’

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪২, ২৩ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘নিরবিচ্ছিন্ন দেশীয় উৎপাদন পরিবেশ নিশ্চিত করাও প্রয়োজন’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে বেশকিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এটি দেশের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে।

একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পের জন্য উপযুক্ত নীতি গ্রহণের পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদন পরিবেশ নিশ্চিত করাও প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন হলে তা স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোনের মাদারবোর্ড, ডিসপ্লে, হাউজিং অ্যান্ড কেসিং, ব্যাটারি, চার্জার, এয়ারফোনসহ সব প্রকার অ্যাক্সেসরিজ উৎপাদন শিল্পের জন্য সহায়ক হবে। এর ফলে এ খাতে দেশীয় বিনিয়োগ বাড়বে, বিদেশ নির্ভরতা হ্রাস পাবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বাজেট বক্তৃতায় দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে বেশকিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে মোবাইল ফোন উৎপাদনের ওপর সারচার্জ অব্যাহতি দিয়ে ফোনসেট আমদানিতে ২ শতাংশ সারচার্জ আরোপ, ব্যাটারি ও চার্জার আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং দেশে মোবাইল ফোনসেট উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে একটি আলাদা প্রজ্ঞাপন জারির কথা বলা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট স্বাগত জানিয়েছেন দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পের উদ্যেক্তারা। তারা প্রস্তাবিত বাজেট দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পের জন্য সহায়ক বলে বিবেচনা করছেন। তাদের মতে, দেরিতে হলেও সরকার এ বিষয়ে উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করেছে। প্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার এখন সময়ের দাবি। এর ফলে দেশে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবারের বাজেটে শুল্ক আহরণের যে সব প্রস্তাব করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই আমাদের দেশীয় শিল্প সংরক্ষণকে মাথায় রেখেই করা হয়েছে। আমরা মনে করছি, এটি আমাদের দেশীয় শিল্প বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এটি একই সঙ্গে রাজস্বের মাধ্যমে সরকারের যে শুল্ক আহরণ পরিকল্পনা, তাও বাস্তবায়িত হবে।

তিনি আরো বলেন, তবে আমি মনে করি, আরো কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে আমাদের শিল্পায়ন নীতি ও উন্নয়ন কৌশল অনুসারে আরো কিছু সুবিধা দেওয়ার সুযোগ ছিল।

দেশীয় মোবাইল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে বেশকিছু সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, এটি আমাদের দেশীয় শিল্প বিকাশে বা অর্থনীতির  জন্য কতটা উপকারী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে মোবাইল যারা বানাচ্ছেন, আবার এসেম্বলিং যারা করছেন, তাদের জন্য তো বটেই, দেশীয় শিল্প বিকাশেও এটি ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, দেশীয় যেসব পণ্য সংরক্ষণে এসব সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছে, তারা যেন উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে ভোক্তাদের জন্য ন্যায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারে, সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে, সে ধরনের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করারও সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যাতে ভোক্তার ওপর অন্যায্যভাবে চাপটা না আসে।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেমন ধরুন যদি চিনির কথা বলা হয়, দেশে চিনি উৎপাদন খরচ থেকে আমদানি খরচ কম। সেক্ষেত্রে সরকার যদি এখনই চিনি শুধু উৎপাদনের কথা ভাবে, তাহলে ভুর্তকিটা সেভাবে আসতে হবে। না হলে চাপটা পড়বে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। কারণ তখন বেশি দামে চিনি কিনতে হবে। তাই উৎপাদকরা যাতে ন্যায্য দামে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করতে পারে সেদিকে সরকারের লক্ষ্য রাখতে হবে।

তিনি বলেন, মোবাইলসহ দেশীয় বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। সরকারকে সামগ্রিক সমাধানের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে উৎপাদক ও উদ্যোক্তা উৎপাদনে উৎসাহিত হয়, একই সঙ্গে কম দামে গ্রাহকদের হাতে উৎপাদিত পণ্যটি তুলে দিতে পারে। তাহলেই সরকারের পরিকল্পনা, প্রস্তাবনা সফল হতে পারে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুন ২০১৮/হাসান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়