ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

এমন মুস্তাফিজ-মিরাজ-লিটনকে চায় বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৮ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এমন মুস্তাফিজ-মিরাজ-লিটনকে চায় বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক : ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে সিনিয়রদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পারফর্ম করেছেন তিন তরুণ ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন কুমার দাস।

এদের মধ্যে লিটনকে নিয়ে ‘যদি-কিন্তু’ থাকলেও বাকি দুজনকে নিয়ে নেই কোনো সংশয়। সীমিত পরিসরে মুস্তাফিজ ছিলেন দারুণ। পুরো সফরেই মিরাজ ছিলেন অনন্য। আর লিটনের পারফরম্যান্স অনেকটাই ছিল শেয়ার বাজারের সূচকের মতো!এই কখনো উঠছে আবার নামছে। তবে শেষটা রাঙানোয় এবং সময়মতো জ্বলে উঠায় ব্যর্থতাগুলো চলে গেছে আড়ালে।

তিন তরুণের অভাবনীয় পারফরম্যান্সে মুগ্ধ অনেকে। তাইতো এমন মুস্তাফিজ-মিরাজ-লিটনকে চায় বাংলাদেশ। তাদের পারফরম্যান্সের আদ্যোপান্ত তুলে ধরছে রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া বিভাগ।

 



মেহেদী হাসান মিরাজ : প্রতিশ্রুতিশীল এবং প্রতিভাবান। দুটো সম্বোধন যেন মেহেদী হাসান মিরাজের নামের পাশেই বেশ মানায়। ডানহাতি স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার আগমণ। কিন্তু ব্যাটসম্যান হিসেবে তার নামটা যেন কাটা পড়ছে বারবার। এখন পুরোদস্তর ডানহাতি স্পিনার মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বল হাতে তার সাফল্যও ঈর্ষণীয়। টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮ উইকেট তার। দুই দলের মধ্যে দ্বিতীয়। দুই টেস্টে দুই দলের বোলারদের মধ্যে সবথেকে বেশি বল করা বোলারটাও মিরাজ। ইকোনমি রেট অসাধারণ। বোলিংয়ে ছিল বৈচিত্র্য। প্রতিপক্ষকে বারবার ২২ গজে পরাস্ত করে মিরাজ নিজেকে চিনিয়েছেন নতুন করে। নতুন বল কিংবা পুরোনো বল দুটোতেই মিরাজ ছিলেন উড়ন্ত।

টেস্টের ফর্ম ধরে রাখেন ওয়ানডেতে। বিশেষ করে রঙিন পোশাকে আরও বেশি ঝলমলে ছিলেন ২০ বছর বয়সি এ ক্রিকেটার। তিনটি ওয়ানডেতেই মাশরাফির সঙ্গে জুটি বাঁধেন। নতুন বলে দুই বাঁহাতি ওপেনার ক্রিস গেইল ও এভিন লুইসকে থামিয়ে রাখেন। বারবার তাদের পরাস্ত করে রানের চাকায় লাগাম টানেন। ‍তিন ওয়ানডেতে ৪.০৬ ইকোনমি রেটে উইকেট নিয়েছেন ৩টি। উইকেট সংখ্যা কম মনে হলেও তার বোলিং ছিল প্রশংসনীয়। টি-টোয়েন্টিতে মাত্র এক ম্যাচে খেলেছিলেন। ম্যাচে উইকেট পাননি। পরবর্তী দুই ম্যাচে কম্বিনেশনের কারণে ছিলেন সাইডবেঞ্চে। শেষটায় মাঠে থাকতে না পারলেও পুরো সফরে দলের বড় অংশ হয়ে ছিলেন মিরাজ। তার উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে হেসেছে বাংলাদেশও। নির্বাচকরাও তার পারফরম্যান্সে খুশি। প্রধান নির্বাচক বলেছেন,‘মিরাজ ওর রোল ভালোভাবেই পালন করেছে। বোলিংয়ে ওর নিয়ন্ত্রণ ভালো ছিল। সাফল্যও পেয়েছে। বৈচিত্র্য নিয়ে বোলিং করেছে। এটা ভালো দিক। কন্ডিশন যেরকমই হোক ও ওর সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং সফল হয়েছে।’

 



মুস্তাফিজুর রহমান : ইনজুরির কারণে টেস্ট সিরিজ মিস করেন মুস্তাফিজুর রহমান। আর ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছিলেন রাজ্যের বোঝা মাথায় নিয়ে! ‘মুস্তাফিজ টেস্ট খেলতে চান না।’ এমন বক্তব্য প্রদানের পর মুস্তাফিজের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। এমনিতেই ইনজুরি থেকে ফিরে পারফর্ম করা কঠিন। সেখানে বিসিবি প্রধানের এমন বক্তব্যে মুস্তাফিজের ওপর ডাবল চাপ। কিন্তু ২২ গজের ক্রিজে সেরকম কিছু বুঝতে দেননি মুস্তাফিজ। বোলিংয়ে দ্যুতি ছড়িয়ে সাফল্য পেয়েছেন নিয়মিত। আর নিয়মিত সাফল্যে বাংলাদেশকে হাসিয়েছেন বারবার। ওয়ানডেতে ৩ ম্যাচে পেয়েছেন ৫ উইকেট। আর টি-টোয়েন্টিতে ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। তবে দুই সিরিজে মিতব্যয়ী হতে পারেননি মুস্তাফিজ। রান খরচ করেছেন বেহিসেবী। তার পারফরম্যান্সেও খুশি নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক বলেছেন,‘মু্স্তাফিজ ভালো বোলিং করেছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা ওর খুব ভালো জানা। কিভাবে বোলিং করলে রান চেক দেওয়া যাবে পাশাপাশি ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখা হবে সেটা ভালো বুঝে। ওয়ানডেতেও ভালো বোলিং করেছে। এ ধারাটা সামনে ধরে রাখলে আরও ভালো করবে ও।’

 



লিটন কুমার দাস : পুরো সিরিজে বাংলাদেশের দুই তরুণ ব্যাটসম্যান হাঁকিয়েছেন দুই হাফ সেঞ্চুরি। যার একটি এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে। অথচ প্রতিটি ইনিংসের শুরুটা কি দুর্দান্ত ছিল ডানহাতি ওপেনারের। ব্যর্থ হওয়া প্রতিটি ইনিংসেই লিটন আউট হন নিজের ভুলে, বাজে শটে; এতে বোলারের কৃতিত্ব খুব কমই ছিল। টেস্ট সিরিজে তামিমের সঙ্গী হয়ে নেমে ৪ ইনিংসে করেছেন ৭২ রান। পুরো দলের মতো লিটনও ছিলেন ব্যর্থ। পারফরম্যান্সের সূচক কখনো নিচে নামত আবার ওপরে উঠত। ধরে রাখতে পারছিলেন না এ ওপেনার। সীমিত পরিসরে ওয়ানডেতে তার সুযোগ হয়নি। তিন ওয়ানডেতে খেলেছিলেন এনামুল হক বিজয়। বিজয় ব্যর্থ হওয়ায় লিটনকে কেন সুযোগ দেওয়া হয়নি সেই নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। জবাবটা লিটন দিয়েছেন টি-টোয়েন্টিতে। শেষ ম্যাচে ৬১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন টি-টোয়েন্টি সিরিজ। বাকি দুই ম্যাচ মিলিয়ে মোট রান ৮৬। তবুও শেষটা রাঙানোয় সবার আস্থা এবং ভরসা পাচ্ছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। প্রধান নির্বাচক তাকে নিয়ে বলেছেন,‘লিটন প্রতিটা ম্যাচেই ভালো শুরু পেয়েছিল কিন্তু বড় করতে পারেনি। একটা বড় ইনিংসের অপেক্ষায় ছিল ও। সেটা শেষ ম্যাচে হয়েছে। যদি এটা টেস্টে হতো তাহলে পুরো সফরেই ও আরও ভালো করত। এখন যেটা হয়েছে সেটা নিয়ে চিন্তা না করা ভালো। সামনে আরও ম্যাচ আছে আমাদের। আমাদের নজরে অবশ্যই ও থাকবে। সামনে আশা করছি নিজের সেরাটা দিতে পারবে লিটন।’

তিন ক্রিকেটার পাচ্ছেন নির্বাচকদের আস্থা ও ভরসা। তাদের পারফরম্যান্সে প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড। যে ব্রান্ডের খোঁজে আছেন সিনিয়র ক্রিকেটাররা। এমন মুস্তাফিজ-মিরাজ-লিটনকে চায় টিম বাংলাদেশ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ আগস্ট ২০১৮/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়