ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘হালাল পণ্য উৎপাদনে অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে পারে’

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৯ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘হালাল পণ্য উৎপাদনে অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে পারে’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : হালাল পণ্য উৎপাদনে ১টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগই মুসলমান। যার ফলে হালাল পণ্য উৎপাদান ও রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং হালাল পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ১টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) অডিটরিয়ামে সংগঠনটি আয়োজিত ‘হালাল সনদের মানদণ্ড এবং প্রতিবন্ধকতা:  বাংলাদেশের সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বিশ্বে হালাল বিষয়টি শুধুমাত্র খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের সাথেও জড়িত। আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো, রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ এবং আরো অধিক হারে জনগণের  কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে হালাল পণ্য উৎপাদনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিডার চেয়ারম্যান বলেন, হালাল খাদ্য মানুষের জীবন ধারণের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ, যা কি না মুসলমানদের পাশাপাশি অমুসলিমরাও গ্রহণ করে থাকে এবং এর ফলে এ ধরনের পণ্যের সম্ভাবনা পৃথিবীর সকল দেশেই রয়েছে। হালাল পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন এর সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান এবং জনবলের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়াসহ হালাল পণ্য সম্প্রসারণের জন্য সরকারের পক্ষ হতে নীতিগত সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ সাইদ বলেন, মুসলিম প্রধান দেশগুলোর পাশাপাশি অমুসলিম জনবহুল দেশগুলোতে হালাল পণ্যের চাহিদা ও ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে হালাল পণ্য উৎপাদনের বিষয়টি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে।

তিনি বলেন, ট্রান্সপারেন্সি মার্কেট রিসার্চ এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারা পৃথিবীতে হালাল পণ্যের বাজার মূল্য ছিল প্রায় ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২৪ সালে এটি প্রায় ১০ দশমিক ৫১ ট্রিলিয়নে এসে দাঁড়াবে। বর্তমানে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দেশে শুধুমাত্র মাংস রপ্তানি করছে এবং বিশেষ করে গো-খাদ্যে যেন কোনোভাবেই ক্ষতিকারক রাসায়নিক অথবা ওষুধ ব্যবহার করা না হয় সেদিকে আরো যত্মবান হতে হবে।

বাংলাদেশের হালাল পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি বাড়াতে হলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, হালাল সনদ প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস বাংলাদেশ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ২৮তম এবং ২০৫০ সালে ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার পূর্বভাস প্রদান করেছে এবং এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। যার ফলে আমাদের দেশে হালাল পণ্য উৎপাদন ও সারা বিশ্বে এ ধরনের পণ্যের বাজারজাতকরণের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। বর্তমানে বৈশ্বিক ইসলামিক বাজার মূল্য প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা পৃথিবীর মোট খরচের প্রায় ১১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে সারা বিশ্বে হালাল পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে ও প্রতিনিয়ত তা বাড়ছে।

ডিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, পৃথিবীজুড়ে হালাল পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং থাইল্যান্ড এগিয়ে রয়েছে। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে  আমরা ভালো অবস্থানে যেতে পারিনি। তাই বাংলাদেশে হালাল পণ্যে উৎপাদনকে আরো জনপ্রিয় ও এ খাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও সহযোগিতা প্রদান, দক্ষ জনবল তৈরি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা উন্নয়ন, হালাল সনদ প্রদানের প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে স্বল্পসুদে আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ আগস্ট ২০১৮/নাসির/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়