ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পরিচালন মূলধনের অভাবে এননটেক্সের উৎপাদন ব্যাহত

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১২, ২০ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরিচালন মূলধনের অভাবে এননটেক্সের উৎপাদন ব্যাহত

বিশেষ প্রতিবেদক : পরিচালন মূলধনের অভাবে উৎপাদন ক্ষমতার পুরোটা কাজে না লাগাতে পারায় সমস্যায় পড়েছে বহুল আলোচিত শিল্প গ্রুপ এননটেক্স। পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানকে বিশাল অংকের ঋণ দিয়ে জনতা ব্যাংকও বিপদে পড়েছে। এ অবস্থায় তারা খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দ্বারস্থ হয়েছে।

সোমবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর নিজ অফিস কক্ষে এননটেক্স ও জনতা বাংকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও এননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুস বাদল উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিককে বলেন, এননটেক্স একটি বিশাল গ্রুপ। তাদের অনেকগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা ভালো করছিল। কিন্তু বর্তমানে পরিচালন মূলধনের অভাবে তাদের উৎপদন ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। বেশকিছু ইউনিট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে, তাদের ঋণের বোঝাও বাড়ছে। বৈঠকে আমি উভয় পক্ষের কথা শুনেছি।

তিনি বলেন, এননটেক্স বলছে, ব্যাংক আমাকে পরিচালন মূলধন দিচ্ছে না। আমি কীভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন অব্যাহত রাখব? উৎপাদন অব্যাহত রাখতে না পারলে ঋণের কিস্তি কীভাবে পরিশোধ করব? অন্যদিকে, জনতা ব্যাংক বলছে, তারা এতগুলো প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে, তাদের পরিচালন মূলধন নাই? তবু চলছে, ঠিক আছে। কিন্তু ব্যাংকের কাগজে তো এননটেক্স ঋণখেলাপী।

এ সময় অর্থমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়, এননটেক্স কি ঋণখেলাপী? এর  জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, জনতা ব্যাংকের কাছে তারা ঋণখেলাপী।

এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রীকে বলা হয়, আপনি কি কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন? অর্থমন্ত্রী বলেন, না, আমি কোনো নির্দেশনা দেইনি। জনতা ব্যাংক কতগুলো প্রশ্ন দিয়েছে, যেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক জিজ্ঞেস করেছে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এননটেক্স এখানো দেয়নি। আমাকে বলেছে, তারা উত্তর দিতে পারবে। আমি বলেছি, তোমরা আগে উত্তর দাও। তারপর বাংলাদেশ ব্যাংক আর জনতা ব্যাংকের সঙ্গে বসব। তখন দেখা যাবে।

তিনি বলেন, শুধু এননটেক্সের দোষ দেখলে হবে না। ব্যাংকগুলোরও দোষ আছে। তারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য ঋণ দেয়, কিন্তু পরিচালন মূলধন দিতে চায় না। এটা সব ব্যাংকেরই দোষ। একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শুধু কলকারখানা বসালেই তো হয় না। তাদের পরিচালন মূলধনেরও প্রয়োজন হয়। ঋণ দেওয়ার আগে এসব বিষয় ব্যাংকগুলোকে ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত।

জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহাকে বৈঠকে আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে পারব না। অন্যকোনো সময় বলব। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বৈঠক শেষে এননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুস বাদল বলেন, আমরা আমাদের গ্রুপের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেছি। আমি জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। সে ঋণ দিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছি। পরিচালন মূলধনের অভাবে পুরো উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছি না। সব বিষয় অর্থমন্ত্রীকে খোলামেলা বলেছি। তিনি আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন।

অনেকটা উদারভাবে জনতা ব্যাংক এননটেক্সকে ৬ বছরে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা দিয়েছে। নিয়মনীতি না মেনে এভাবে ঋণ দেওয়ায় বিপদে ব্যাংক। গ্রাহকও ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।

জনতা ব্যাংকের মোট মূলধন ২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সুযোগ আছে। অর্থাৎ এক গ্রাহক ৭৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পেতে পারেন না। দেওয়া হয়েছে মোট মূলধনের প্রায় দ্বিগুণ।

ব্যাংক দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের, সরকারের নিয়োগ দেওয়া সেই পরিচালনা পর্ষদই এই বিপজ্জনক কাজটি করেছে। হল-মার্ক ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির পর এটিকেই পারস্পরিক যোগসাজশে সাধারণ মানুষের আমানত নিয়ে ভয়ংকর কারসাজির আরেকটি বড় উদাহরণ বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, এটি একক ঋণের বৃহত্তম কেলেঙ্কারি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাতের সময় এই অর্থ দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। পর্ষদের সিদ্ধান্তে বারবার ঋণ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয় খেয়াল-খুশিমতো।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ আগস্ট ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ