‘মেলায় খুশি, অফিসে হয়রানি’
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : নতুন ই-টিআইএন খোলা, আয়কর রিটার্ন জমা কিংবা কর সেবা নেওয়াসহ বিভিন্ন সেবা নিতে নবম আয়কর মেলায় ভিড় করছেন করদাতারা।
মেলায় এসে অধিকাংশ করদাতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবায়। তবে করদাতাদের দাবি আয়কর মেলায় যত সেবা পাওয়া যায় তার অধিকাংশ সেবা মেলে না প্রতিষ্ঠানটির কর অফিসগুলোতে।
মেলায় ইটিআইএন খোলা ও রিটার্ন দাখিল করা বেশ সহজ। হেল্প ডেস্কগুলো যথেষ্ট সহযোগিতাও করছে। কিন্তু বিপাকে পরতে হয় ট্যাক্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে গিয়ে। টাকা বা বকশিষ ছাড়া মিলে না ট্যাক্স সার্টিফিকেট এমনটাই দাবি করেছেন উত্তরা থেকে আসা এক ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ট্যাক্স সার্টিফিকেট যদি অনলাইনে পাওয়া ব্যবস্থা থাকতো তাহলে ব্যক্তি খাতে আয়কর দেওয়ার প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পেতো। কারণ অফিসে গেলে টেবিলে টেবিলে বকশিস দিতে হয় আমাদের। যেটা আয়কর মেলায় নেই।
রোববার অফিস খোলা থাকায় রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে মেলার ষষ্ঠ দিনে করদাতাদের ভিড় তুলনামূলক কম ছিল। তবে মেলা কর্তৃপক্ষ আশা করছে বিকেলে ভিড় অনেক বাড়বে।
আয়কর মেলায় সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও অন্যান্য পেশাজীবীদেরও মেলায় আসতে দেখা গেছে। মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কর অঞ্চলের রিটার্ন গ্রহণ বুথ, হেল্প ডেস্ক, ব্যাংকের বুথ, ই-পেমেন্ট বুথ, ই-টিআইএন বুথসহ সব বুথে করদাতাদের মোটামুটি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
কাঠালবাগান থেকে স্ত্রী ও নিজের কর বিবরণী জমা দিতে মেলায় এসেছেন গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত মো. বাবলু। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, স্ত্রীর জন্য আজ অফিস থেকে এক বেলা ছুটি নিয়ে মেলায় এসেছি। প্রতি বছর মেলার জন্য অপেক্ষা কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য। কারণ অফিসে গেলে অনেক ঝক্কি ও হয়রানি পোহাতে হয়। তাই মেলা এসে রিটার্ন জমা দেই।
‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’ স্লোগানে শুরু হওয়া এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা। এবারে ১৭৪টি স্থানে আয়কর মেলা হচ্ছে। প্রতিদিন মেলা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে।
মেলার সমন্বয়ক ও এনবিআর সদস্য জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘মেলায় করদাতাদের সেবা নেওয়া, নিবন্ধন নেওয়া ও রিটার্ন জমা দেওয়ার ধারা অব্যাহত রয়েছে। কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথেই মিলছে সমাধান। ট্যাক্স সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়টি একটু জটিলতা রয়েছে। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে ভাবা যেতে পারে।
সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার পঞ্চম দিন (শনিবার) পর্যন্ত কর আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫৫৮ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার ৫২৭ টাকা। যেখানে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৭ সালের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৩২ টাকা। এ সময়ে মেলায় সেবা নিয়েছেন ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭২ জন, রিটার্ন দাখিল করেছেন ৩ লাখ ৪২ হাজার ৮৩৩ জন এবং নতুন ইটিআইএন নিয়েছেন ২৪ হাজার ৯০৩ জন করদাতা। মেলায় করদাতাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাজধানীর টিএসসি, রামপুরা, বেইলি রোড, মতিঝিল, মিরপুর ও উত্তরা থেকে ১৫টি শাটল বাস নিয়োজিত রয়েছে।
প্রতিদিনের মতো আজও অনুষ্ঠিত হয়েছে কর শিক্ষণ ফোরাম। এতে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ৪০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১০ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া আয়কর মেলার পরিধি এবং মেলার মাধ্যমে আয়কর বিভাগের সেবার পরিসর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ নভেম্বর ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন