ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

অর্থ ফেরত আনতে এ মাসেই মামলা : অর্থমন্ত্রী

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অর্থ ফেরত আনতে এ মাসেই মামলা : অর্থমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক : চলতি মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে মামলায় কে বা কাদের আসামি করা হবে-তা এখনও ঠিক করা হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।

রোববার সচিবালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে কী করণীয় সে সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকর গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, মামলার জন্য ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এজন্য আমাদের একজন আইনজীবী আছেন এবং আমেরিকার একজন আইনজীবী আছেন তারা যৌথভাবে বসে মামলার সময় ঠিক করবেন।

তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে নিউ ইয়র্কে। তাই মামলা সেখানেই করতে হবে। আমাদের আইনজীবী এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। তবে কার বিরুদ্ধে কে মামলা করবেন-এ সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। এছাড়া কয়জনকে আসামি, কয়জনকে বাদী ও কয়জনকে সাক্ষী করা হবে তা দুই আইনজীবী বসে ঠিক করবেন।

ড. ফরাস উদ্দিনের তদন্ত রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে কি না-এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের প্রয়োজন হলে করব, না হলে করব না। মামলার আগে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হলে মামলার দরকার কি? এছাড়া তদন্তে নেগেটিভ বা পজেটিভ কি আছে আমি কিছুই জানি না। ঢাকায় বসে কে কি কমিটি করল, কে কি রিপোর্ট দিল, তা নিয়ে আলোচনার জন্য এখন সঠিক সময় না।

অপর এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার আইনজীবী যে আমাদের পক্ষে লড়বেন তাদের কমিশন অনেক বেশি। প্রতিটি আইনজীবীর একটি নির্দিষ্ট কমিশন থাকে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছিলেন, রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে দুই প্রতিষ্ঠানকে আসামি করে মামলা করা হবে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। মূল আসামি আরসিবিসি হলেও এই ঘটনার সঙ্গে অনেক দেশ জড়িত। এ মামলার জন্য আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কা এবং ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে।

এই ঘটনার প্রায় এক মাস পর ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে বিষয়টি বাংলাদেশ জানতে পারে। এ ঘটনা চেপে রাখতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। বড় ধরনের রদবদল করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানিলন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সিআইডি এ পর্যন্ত ২০ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছ থেকে সময় নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকার গঠিত ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করা হয়নি। একইভাবে রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে রিজাল ব্যাংকের ওপর করা তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করেনি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিএসপি (ব্যাংককো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপাইনস)। ফলে বিশ্বব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার ভেতরের অনেক তথ্যই প্রকাশিত হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার জন্য তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও কর্মকর্তাকেই এখন পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। যদিও এর জন্য দায়ী করা হয়েছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি)।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জানুয়ারি ২০১৯/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়