ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্কুলে অনুপস্থিতি-অনিয়মে ক্ষোভ দুদক চেয়ারম্যানের

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্কুলে অনুপস্থিতি-অনিয়মে ক্ষোভ দুদক চেয়ারম্যানের

ইকবাল মাহমুদ (ফাইল ফটো)

নিজস্ব প্রতিবেদক : অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পেয়ে এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চট্টগ্রামের ছয়টি স্কুলে আকস্মিক পরিদর্শন করেছেন।

পরিদর্শনে নগরীর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাটিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও শীতলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষকের অনুপস্থিতি ও দায়িত্ব অবহেলাসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন তিনি।

এসময় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমাদের সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে কাউকেই ছিনি-মিনি খেলত দেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে দুদক দণ্ডবিধির ১৬৬ ধারা প্রয়োগ করবে। তারপরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতিসাধন করবেন বা করার চেষ্টা করবেন এমন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

রোববার সকাল থেকে তিনি স্কুলগুলো পরিদর্শন করেছেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য রাইজিংবিডিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

দুদক জানায়, দুদক চেয়ারম্যানের কাছে বিশেষ মাধ্যমে খবর আসে চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকগণ নিয়মিত স্কুলে আসেন না।  বিষয়টি গোপন রেখে দুদক চেয়ারম্যান সকাল ৮.২৫ মিনিটে পৌঁছে যান চট্টগ্রামে । সকাল সোয়া ৯টায় নগরীর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে হাজির হয়ে দেখেন,  স্কুলের আটজন শিক্ষকের মধ্যে একমাত্র ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপস্থিত। বাকি সাতজন শিক্ষকই অনুপস্থিত। ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনের আশেপাশে আচার-চানাচুর খেয়ে অলস সময় পার করছে। এ সময়ে অভিভাবকগণ দুদক চেয়ারম্যানকে কাছে পেয়ে তাদের সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন।

এর পরপরই দুদক চেয়ারম্যান যান নগরীর ভাটিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । সেখানে যেয়ে দেখেন ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে দুইজন শিক্ষক অনুপস্থিত। এদের অনুপস্থিতির কারণ স্কুল কর্তৃপক্ষ দুদক চেয়ারম্যানকে জানাতে পারেননি। দুদক চেয়ারম্যান ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি সিট পরীক্ষা করে দেখেন, গতকাল যে সকল শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল তাদের অনেককেই উপস্থিত দেখানো হয়েছে। আবার আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের রোল কল করা হয়নি। এ বিষয়েও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।

সর্বশেষ দুদক চেয়ারম্যান আকস্মিক পরিদর্শনে যান নগরীর শীতলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা কোনো শিক্ষার্থীকে এবার এসএসসি পরীক্ষায়  সুযোগ (সেন্ট-আপ) দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি অবহিত হয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান। তবে নবম শ্রেণিতে এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীদের ২০০০ টাকার বিনিময়ে দশম শ্রেণিতে প্রোমোশন দেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, এটা অনৈতিক। শিক্ষাক্ষেত্রে অনৈতিকতার কোনো স্থান থাকতে পারে না।

এছাড়া, আজ চট্টগ্রাম মহানগর ও সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে দুদক চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খাজুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। গ্রামের এই বিদ্যালয়ে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি এবং শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি দেখে দুদক চেয়ারম্যান সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিদ্যালয়টির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ দেখে সংশ্লিষ্টদের প্রশংসা করেন দুদক চেয়ারম্যান।

এরপর তিনি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তিনি একই উপজেলার ছোট কমলদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। এ বিদ্যালয়েতেও ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতি দেখে দুদক চেয়ারম্যান সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন দুদক চেয়ারম্যান।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জানুয়ারি ২০১৮/এম এ রহমান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়