ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

অভিমানে ক্রিকেট ছাড়লেন রবিউল

আব্দুল্লাহ এম রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অভিমানে ক্রিকেট ছাড়লেন রবিউল

রবিউল ইসলাম শিবলু

একটা সময় বাংলাদেশ দলে খেলেছেন দাপটের সঙ্গে। রবিউল ইসলাম শিবলু পেস বোলিংয়ে দলের অন্যতম ভরসাও ছিলেন।

চোটে পড়ে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন চার বছরের বেশি সময় হয়ে গেল। এরপর অনেক চেষ্টা করেও আর ফিরতে পারেননি। সর্বশেষ গত অক্টোবরে জাতীয় ক্রিকেট লিগে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন খুলনা বিভাগের হয়ে। ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই প্রথম শ্রেণির ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়েছিল তার।

তবে সোমবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্লেয়ার্স ড্রাফটে দল পাননি ৩২ বছর বয়সি এই ডানহাতি পেসার। এখানেই শেষ নয়, আগামী মাসের শুরুতে হতে যাওয়া জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে (আন্তঃজেলা ক্রিকেট) নিজ জেলা সাতক্ষীরার ৩৪ জনের প্রাথমিক স্কোয়াডেও তার জায়গা হয়নি! তার ফিরে আসার এই চেষ্টাকে মূল্যায়ন করেনি কেউ।

তাই অনেকটা অভিমানেই সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন রবিউল। মঙ্গলবার রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত আলাপকালে জানিয়েছেন তার অবসরের কথা। জানিয়েছের পরবর্তী পরিকল্পনার কথাও।

খেলা থেকে অবসর নিলেও ক্রিকেট ছাড়ছেন না। নিজেকে কোচিং পেশায় জড়ানোর ইচ্ছা তার। নিজ জেলা সাতক্ষীরার পেসারদের নিয়ে কাজ করতে চান ভবিষ্যৎ জীবনে। আবদুল্লাহ এম রুবেল-এর নেওয়া সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-



রাইজিংবিডি: কেমন আছেন?
রবিউল ইসলাম:
সব মিলিয়ে ভালোই আছি। নিজেকে নতুন করে ভালো রাখছি।

রাইজিংবিডি: সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নাকি অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন?
রবিউল ইসলাম:
হ্যাঁ, ঘটনা সত্য। এখন মনে হচ্ছে ক্রিকেটকে বোধ হয় আমার দেওয়ার আর কিছু নেই! তাই টপ লেভেলের সব ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছি। তবে সাতক্ষীরায় স্থানীয় ক্রিকেট লিগে আরো কিছুদিন খেলার ইচ্ছা আছে।

রাইজিংবিডি: বাদ পড়া কিংবা হোঁচট খাওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হাল ছেড়ে দিলেন কেন?
রবিউল ইসলাম:
এখন আর ভালো লাগছে না (কণ্ঠে অভিমান)।

রাইজিংবিডি: ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দল না পাওয়ার অভিমান বা ক্ষোভ থেকেই কি খেলা ছাড়লেন?
রবিউল ইসলাম:
অভিমান বা ক্ষোভ তো আছেই। তবে এখন আর এসব বলে কী হবে। হয়তো আমার আর ক্রিকেটকে কিছু দেওয়ার নেই, সেজন্যই ডাক পাইনি। আমি গত মৌসুমেও ঢাকা প্রিমিয়ারে দল পাইনি। এ বছরও পাইনি, নিজেকে ফিরে পাওয়ার এত চেষ্টার পরেও দল না পাওয়া কষ্টের। চলতি মৌসুমে এনসিএলে খুলনার হয়ে ম্যাচ খেলেছি আমি। নিজেকে ফিট প্রমাণ করেই দলে জায়গা পেয়েছিলাম। চারটা দিন মাঠে থাকা কিন্তু কম না। আমি ২৩ ওভার বোলিংও করেছিলাম। তার পরেও দল পেলাম না, এটা তো কষ্টেরই। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে (আন্তঃজেলা ক্রিকেট) সাতক্ষীরা জেলার ৩৪ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াড দেওয়া হয়েছে গতকাল। ওই টিমেও আমার জায়গা হয়নি। এতটা কষ্টের পরেও যখন আমার মূল্যায়ন হলো না, তখন বুঝলাম আামার বোধ হয় ক্রিকেটকে আর কিছুই দেওয়ার নেই। তবে আমার কারও ওপর রাগ বা ক্ষোভ নেই। হয়তো দোষটা আমারই।

রাইজিংবিডি: খেলা ছেড়ে দিলেও ক্রিকেট ছাড়া কি থাকতে পারবেন?
রবিউল ইসলাম:
ক্রিকেট ছেড়ে থাকাটা আমার জন্য আসলেই কষ্টের। ক্রিকেট ছেড়ে থাকা হবে না। খেলা ছাড়ার পর আমি কোচিং পেশায় মনোনিবেশ করতে চাই। কোচিংয়ে ‘এ’ লেভেল করে সাতক্ষীরাতে একটি ক্রিকেট একাডেমি করার ইচ্ছা আছে আমার।



রাইজিংবিডি: যেভাবে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন... কি মনে হচ্ছে পূর্ণতা পেয়েছে আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ার?
রবিউল ইসলাম:
আমি আমার পুরো ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবার ভালোবাসা পেয়েছি, এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, এটাই আমার পূর্ণতা। যদি পূর্ণতার কথা বলেন, আমি বলব আমি ৯০ ভাগ পূর্ণতা পেয়েছি। আমি জাতীয় দলে খেলেছি, বিসিএলে খেলেছি, ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দল খুলনা বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে খেলেছি। তবে আমি বিপিএল খেলতে পারিনি, এটাই আমার একমাত্র অপূর্ণতা। তবে আবারো বলছি, ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সকলের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

রাইজিংবিডি: ক্রিকেট জীবনে আপনার সেরা মুহূর্ত?
রবিউল ইসলাম :
এনসিএলের একটি ম্যাচের কথা আমার মনে পড়ে। তিন-চার বছর আগের কথা হবে। বগুড়ায় রাজশাহী বিভাগের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলছি আমরা। রাজশাহী ১৮৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করে তখনো পর্যন্ত ১ উইকেটে ১০১ রান করে ফেলেছে। ওই সময়ে আমি বোলিংয়ে আসি। আর প্রতিটি বল করে নিজেই আবার প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অনুপ্রেরণা দিচ্ছিলাম। আমার অনুপ্রেরণায় সবার মধ্যেই অন্যরকম একটা ফিলিংস আসে। আমরা ওই ম্যাচটা ১৫ রানে জিতেছিলাম।

রাইজিংবিডি: ঠিক এই মুহূর্তে  কোন বোলিং স্পেল আপনার মনে পড়ছে?
রবিউল ইসলাম:
জিম্বাবুয়ে সিরিজ। যেটার কথা আপনারাও সব সময় আমাকে বলেন। বিসিএলের একটা ম্যাচের কথা বলব আমি। এটা বোধ হয় ২০১৩ সালের কথা। প্রাইম ব্যাংক সাউথ জোনের হয়ে খেলছি আমি। দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৭ রান টার্গেট ছিল প্রতিপক্ষের। তখন অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে আমি বললাম, “নতুন বলে আমাকে দাও, আমি ভালো করব”। ও অন্য কাউকে বোলিং দিতে চাচ্ছিল। তখন ইমরুল আবার সুজন চাচার (খালেদ মাহমুদ) কাছে শুনতে গেল। তো চাচা বলল, “পাগলা যখন চাচ্ছে, দে পাগলাকে বল করতে”। ওই ওভারে একটি নো বল করেছি, তবে সাত বল থেকে তিনটি উইকেট নিয়েছিলাম। অন্যপ্রান্তে সোহাগ গাজী প্রথম ওভারটা মেডেন নিয়েছিল। পরের ওভারে আবারও আমি একটি উইকেট পেয়েছি। এটা আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা মুহূর্ত।

রাইজিংবিডি: কোন ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি মিস করবেন?
রবিউল ইসলাম:
আসলে পুরো ক্রিকেটকেই আমি মিস করব। জাতীয় দলে যারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন তাদেরকে মিস করব। বিশেষ করে খুলনা বিভাগের টিমটাকে আমি অনেক বেশি মিস করব। এই টিমের সবাই আমাকে সব ধরনের সাপোর্ট করত। এখানে সিনিয়র জুনিয়র মিলে মিশে একাকার একটা টিম ছিল। সবাই আমাকে খুবই সাহায্য করত।

রাইজিংবিডি: জাতীয় দলে থাকার সময় আপনার সবচেয়ে কাছের কে ছিল?
রবিউল ইসলাম:
সবাই খুব কাছের ছিল, তখন মিথুন জাতীয় দলে ছিল না, কিন্তু ও আমার খুব কাছের ছিল। আর জাতীয় দলে সোহাগ গাজী আমার খুব কাছের ছিল।



রবিউলের বোলিং ক্যারিয়ার
:
২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ৯ টেস্টে ৩৯.৬৮ গড়ে ও ৩.২০ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ২৫ উইকেট। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন দুবার। ইনিংস সেরা বোলিং ৭১ রানে ৬ উইকেট, ২০১৩ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এ ছাড়া ৩ ওয়ানডেতে ২টি ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলে কোনো উইকেট পাননি।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৭৭ ম্যাচে ৩০.৭৮ গড়ে ও ৩.৪ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ২২৪ উইকেট। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ৯ বার। ম্যাচে দশ উইকেট একবার। ইনিংস সেরা বোলিং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই ৭১ রানে ৬ উইকেট। এ ছাড়া ৩৮ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৪০টি ও ৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন।



রাইজিংবিডি/খুলনা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/আবদুল্লাহ এম রুবেল/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়