ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই’

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ৩ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, এনবিআরের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাজস্ববান্ধব ও সৎ হতে হবে। নিজের নয়, দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই, যাতে আমাদের প্রতি করদাতাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়।

রোববার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় কর অঞ্চল-১ আয়োজিত ‘অংশীজন রাজস্ব সংলাপ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করের আওতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে করহার কমিয়ে আওতা বাড়ানো যেতে পারে। অর্থমন্ত্রীও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। এটা পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ করছে। এছাড়া, করদাতা বৃদ্ধির জন্য বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য খাতে জরিপ শুরু হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের সময় করদাতাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৌশলগত কারণে আগের করের বিষয়ে জিজ্ঞেস না করে বর্তমান আয়ের ওপরই করদাতা বাড়ানো যেতে পারে। আমরা কর না দেওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে চাই। ভীতি নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে আমরা করদাতা বাড়াতে চাই।

তিনি বলেন, আমাদের কর জিডিপির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। আর একটু বেশি হলে ভালো হতো। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষ হলেও সরাসরি ১ কোটি মানুষও কর দেয় না। তবে উৎসে করসহ হিসেব করলে করদাতার সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যাবে। রিটার্ন দেয় ২০ লাখের কম, যা লজ্জার। এ সংখ্যা বাড়াতে হবে। কর জিডিপির হার না বাড়ালে উন্নয়ন করা দুরুহ হয়ে পড়বে। সেজন্য কর জিডিপি বাড়াতে হবে। কর আদায় না বাড়ালে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেবে। এ ঋণ নেওয়ার ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে।

গণপরিবহনে কর বাড়ানোর বিষয়ে মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, আমাদের গণপরিবহন খাত অনেক বড় হয়েছে। এ খাত থেকে কর আদায় বৃদ্ধি করার সময় এসেছে। কিন্তু এ খাতে কর বৃদ্ধি করতে গেলে একটি গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে তাতে ব্যাঘাত ঘটায়। যাত্রীদের ওপর ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তাই সময় এসেছে আলোচনার মাধ্যমে এ খাত থেকে কর আদায় বৃদ্ধি করার। অনেকেই সম্পত্তি কিনে রাখে। একসময় এর দাম অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু বৃদ্ধি করা দাম অনুযায়ী কর আদায় হয় না। এ সম্পত্তিকেও করের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এছাড়া, সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন ফি অনেক বেশি, কিন্তু কর কম। আমাদের প্রস্তাব, রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে করের আওতা বাড়ানো উচিত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) কালিপদ হালদার বলেন, আমরা করদাতাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে যাই কিছু করি না কেন, করদাতাদের মধ্যে এখনো ভীতি রয়েছে। সে অলীক ভীতি দূর করতে আমরা কাজ করছি। এ বছর থেকে কর আহরণ পদ্ধতি আরো সহজ করা হবে। আধুনিক কর ব্যবস্থায় উৎসে কর ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিতে কর প্রদান করে বছর শেষে করদাতারা রিবেট পায়। আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা তা চালু করতে পারি না। তবে এ ক্যালেন্ডার বছর থেকে কয়েকটি উৎসে কর অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।

রাজস্ব সংলাপে অংশ নেওয়া সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২১৫টি ব্র্যাঞ্চ জিডিটাল করা হয়েছে। ডিজিটাল করার আগে এসব ব্র্যাঞ্চে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার উৎসে কর আদায় হতো। ব্র্যাঞ্চ ডিজিটাল ও হোম সার্ভিস চালু করার ফলে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার উৎসে কর আদায় হয়। কিন্তু কর অফিস নিয়ে তাদের মধ্যে জড়তা আছে। শুধু করসেবা জিডিটাল করলে হবে না, দোরগৌড়ায় পৌঁছে দিলে কর আদায় অনেক বেড়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার নাহার ফেরদৌসী বেগমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন কাতার এয়ারওয়েজ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জয় প্রকাশ নায়ার। অনুষ্ঠানে কর অঞ্চল-১ এর আওতাধীন ৯৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ৩৪টি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মার্চ ২০১৯/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়