ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে কড়াকড়ি হচ্ছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ২৫ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে কড়াকড়ি হচ্ছে

কেএমএ হাসনাত : সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে এখন থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হবে। বিনিয়োগ করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ই-টিন ও মোবাইল নাম্বার লাগবে। বিনিয়োগকৃত অর্থের আসল ও সুদ সরাসরি চলে যাবে গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।

কালো টাকা এবং এ খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ বন্ধ করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর এ পদ্ধতি চালু করছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সারা দেশে এ পদ্ধতি চালু করতে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণায় থেকে গত রোববার এক চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: অগ্রাধিকার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা (পিইএমএস)’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুসহ সঞ্চয় স্কিমের সুদ ও আসলের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চিঠিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে।

সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-সঞ্চয়পত্র অটোমেশন ব্যবস্থা চলতি মাসের মধ্যেই ঢাকা মহানগরীতে, এপ্রিলে বিভাগীয় শহরে এবং জুন মাসের মধ্যে দেশের অন্যান্য স্থানে অবস্থিত সব দফতরে চালু করতে হবে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে এ ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূতভাবে কোনো সঞ্চয় স্কিম লেনদেন না করার বিষয়ে সঞ্চয় স্কিম লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন দফতরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

সঞ্চয়পত্র অটোমেশন ব্যবস্থায় থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দৈনিক ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকের হিসাব ডেবিট করে সরকারি হিসাবে ক্রেডিট করা এবং সঞ্চয় স্কিমের সুদ ও আসলের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন দফতর ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে অটোমেশন (অনলাইন) পদ্ধতিতে শুরু করেছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ অভ্যন্তরীণভাবে অটোমেশন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায়, সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায়, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের ব্যুরো অফিস এবং বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের প্রধান কার্যালয়ে প্রাথমিকভাবে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারি ব্যয়-ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচির আওতায় সোনালী ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ৪২টি ব্যাচে ভাগ করে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

এ কর্মসূচির আওতায় সোনালী ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ১৩টি ব্যাচে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে গত ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ১১টি ব্যাচে গত ১১ মার্চ থেকে শুরু করে ১৯ মার্চ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ১৮টি ব্যাচে গত ২১ মার্চ থেকে শুরু করে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

জানা গেছে, ‘ন্যাশনাল সেভিং সার্টিফিকেটস অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে সঞ্চয়পত্রের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। ডাটাবেজ চালু হলে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের ই-টিন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) সনদ জমা দিতে হবে। ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। টাকার পরিমাণ এর বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এজন্য সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হবে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ই-টিন সনদ জমা দিতে হবে। এ উদ্যোগের ফলে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই আসবে। একই সঙ্গে কালো টাকা বিনিয়োগকারীদের চিহ্নিত করা যাবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মার্চ ২০১৯/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়