ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

২০১৮ সালে তামাকে মৃত‌্যু ১ লাখ ২৬ হাজার

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ১৬ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২০১৮ সালে তামাকে মৃত‌্যু ১ লাখ ২৬ হাজার

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: ২০১৮ সালে তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। আর এ খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের পরিমাণ মাত্র ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। 

অর্থনৈতিক গবেষনা ব্যুরো-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট সম্মিলিতভাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ‌্য দিয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনির্দিষ্ট করারোপ ও সিগারেটের মূল্যস্তর কমানোর দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও অর্থনৈতিক গবেষনা ব্যুরো এর ফোকাল পার্সন ড. রুমানা হক। তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনির্দিষ্ট করারোপ ও সিগারেটের মূল্যস্তর কমানোর দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তরা বলেন, বাংলাদেশে সিগারেটে বহুস্তর বিশিষ্ট করকাঠামো চালু থাকায় বাজারে অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য সিগারেট বিদ্যমান। ফলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে ভোক্তা তুলনামূলকভাবে কমদামি সিগারেট বেছে নিতে পারছে। এছাড়া করের ভিত্তি ও করহার খুবই কম হওয়ায় বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য (জর্দা ও গুল) সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে। তামাকের ব্যবহার কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যের মূল্য বাড়ানো।

তামাক ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করতে ২০১৯-২০ কর প্রস্তাব বৃদ্ধির প্রস্তাবে,সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে কমিয়ে দুটি নির্ধারণ, করারোপের ক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে একটি মূল্যস্তর (নিম্নস্তর) এবং উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরকে একত্রিত করে আরেকটি মূল্যস্তরে (উচ্চস্তর) নিয়ে আসা, নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ ,  উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১০৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং সব ক্ষেত্রে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার দাবি জানানো হয়।

এছাড়া বিড়ির মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ৪ দশমিক ৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য (জর্দা ও গুল)-র ক্ষেত্রে ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে সিগারেট ও বিড়ির ন্যায় ‘খুচরা মূল্যের’ ভিত্তিতে করারোপ, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার উপর ৫ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের উপর ৩ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার সুপারিশ করা হয়।

বক্তারা বলেন, এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রায় ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে। সিগারেটের ব্যবহার ১৪ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে প্রায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিড়ির ব্যবহার ৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এক মিলিয়ন বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে । এ প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে ৬ হাজার ৬৮০ কোটি থেকে ১১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে (জিডিপি’র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত) অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। এই অতিরিক্ত রাজস্ব তামাক ব্যবহারের ক্ষতি হ্রাস, অকাল মৃত্যু রোধ এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ব্যয় করা সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, দ্য ইউনিয়ন এর কারিগরী পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক , বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ এবং  এইড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ এপ্রিল ২০১৯/এম এ রহমান/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়