ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিল্পের বিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশ, চাপ বাড়ছে সম্পদে

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিল্পের বিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশ, চাপ বাড়ছে সম্পদে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্পের ক্রমাগত বিকাশের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ।  উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবার উৎপাদিত বর্জ্যের কারণে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ।

বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এখনই টেকসই উৎপাদন ও ভোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা দরকার।  পরিবেশের ওপর পোশাক শিল্প খাতের এই নেতিবাচক প্রভাব কমাতে উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্প কলকারখানার পানি, জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস করে বর্জ্য নিষ্কাশন কমানো প্রয়োজন।’

শনিবার ঢাকার ব্রাক সেন্টারে ‘অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ’ ও ‘ফ্যাশন রিভোল্যুশন’ আয়োজিত ‘ভয়েসেস অ্যান্ড সল্যুশনস’ শীর্ষক সেমিনারে এমন কথা উঠে আসে।  অনুষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য, ফ্যাশন শিল্পে টেকসই উৎপাদন এবং ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সব পক্ষকে এক জায়গায় নিয়ে আসা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির পোশাক খাত কীভাবে পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে তার ওপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।  প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য খাত ফ্যাশন শিল্প।  যেটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দূষণকারী খাত।  একইসাথে এটি সারা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পানি ব্যবহারকারী খাত।  অপরদিকে, শুধু এই একটি খাত থেকেই বিশ্বের ২০ শতাংশ বর্জ্য পানি এবং ১০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয়।

প্রবন্ধে বলা হয়, শিল্প কারখানার সকল ক্ষেত্র, যেমন কাটা, বয়ন, সেলাই, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তৈরী পোশাক উৎপাদন বায়ূ, পানি ও মাটি দূষণ করে থাকে।  বেশিরভাগ কারখানা নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় তাদের বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়।  ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের এক গবেষণা মতে, প্রতিবছর পোশাক শিল্প কারখানায় পোশাক ও তুলা ধৌতকরণ এবং রংয়ের কাজে ১৫শ বিলিয়ন লিটার পানি ব্যবহার করা হয়।  কারখানাগুলো ব্যবহারের পর এই বিষাক্ত পানি নদী ও খালে নিষ্কাশন করে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিল্পকারখানা হতে নিষ্কাশিত বর্জে্যর পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।  জলাশয়কে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।  বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে করতে হবে আরো উন্নত।’

মেয়র বলেন, ‘রানা প্লাজা ধ্বংসের পর বাংলাদেশের শিল্প খাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে।  তবে, অংশীদারদের মধ্যেই এখনো সচেতনতার অভাব রয়েছে।  টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে পোশাক শিল্পখাতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।  নিজেদের দায়িত্ব না এড়িয়ে নিজেদের ব্যবহারে ও মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।  জোর দিতে হবে গবেষণায় এবং শিক্ষাব্যবস্থায় টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহারের বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণে।’

অনুষ্ঠানের ধারণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় গত দুই দশকে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে।  অতিরিক্ত ব্যবহার ও নগরীকরণের কারণে পুনরায় পানি সরবরাহের অভাবই হলো এর মূল কারণ।  ঢাকার পানি সরবরাহের প্রায় ৮২ শতাংশই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল।  পানির এই বিশাল চাহিদা পূরণের জন্য, ভূ-পানির স্তর প্রতিবছর ২-৩ মিটার পরিমাণে হ্রাস পাচ্ছে।  গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যদি পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তবে ২০৫০ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ কমে গিয়ে ১১০ থেকে ১১৫ মিটারে নেমে আসবে।  এ ছাড়া, পোশাক শিল্পের বর্জ্য হতে নির্গত মিথেন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।  পোশাক প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত রাসায়নিক রং মাটির সঙ্গে মিশে ভূপৃষ্ঠ এবং ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত করে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ দিনব্যাপী এই আলোচনার দ্বিতীয় ভাগে বলেন, ‘দেশের কারখানাগুলোর পরিবেশ বিষয়ক তদারকি ব্যবস্থাপনা আছে।  তবে তদারকির জন্য যথেষ্ট লোকবল নেই।  আমাদের পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা।  একইসঙ্গে দরকার সকলের মানসিকতার পরিবর্তন।’

আয়োজকরা প্রবন্ধে বলেন, বর্তমানে সমস্ত শিল্প কর্মসংস্থানের ৪৫ শতাংশই হয় পোশাক এবং টেক্সটাইল খাতে, যা মোট জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশ।  দেশে রপ্তানি আয়ের ৭৮ শতাংশ আসে এই খাত থেকে।  এই খাত, যেখানে কাজ করছে দেশের ৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ, তার পরিচালনার ফলে পরিবেশের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব, তা বিবেচনা করে এই শিল্পকে টেকসই করার প্রতি মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

আর তাই এই সেমিনারে এ আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি প্লাটফর্মের সূচনা করা হয় যেখানে ফ্যাশন শিল্পখাতের অংশীদারগণ তাদের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে কথা বলবেন এবং অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাপ্ত সমাধান তুলে ধরবেন সকলের সামনে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৯/হাসান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়