ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘বাজারে টিকতে পোশাক খাতের প্রণোদনা আবশ্যক’

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ২ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বাজারে টিকতে পোশাক খাতের প্রণোদনা আবশ্যক’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রস্তাবিত প্রণোদনা একান্ত আবশ্যক।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বায়িং হাউজ ও এজেন্সির মাধ্যমে পণ্য কেনার কারণে আমাদের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে যথোপযুক্ত দাম পাচ্ছে না। ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানসমূহ যেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের নিকট হতে সরাসরি পণ্য ক্রয় করেন সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বিজিএমইএকে।’

বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়ন প্রেক্ষিত আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে পণ্যের যথাযথ মূল্য পাওয়ার জন্য আমাদের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আমাদের কারখানাসমূহ এখন অনেক বেশি কমপ্লায়েন্স এবং ভালো মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করছে।  অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক খাত যেন আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ হতে সর্বাত্মক সহযোগিতার করা হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা, বেলারুস ও চেকোস্লোভাকিয়ার সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই এ দেশগুলোর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হবে এবং ব্রাজিলের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।  এ ছাড়া, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তৈরি পোশাক খাতের পরিচালনার ব্যয় বাড়বে।’

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারের সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক। আমরা এ খাতের ইতিবাচক সংকটে ভুগছি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের ইতিবাচক ইমেজ গড়ে তোলার জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা খুবই জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতকে টেকসই করার পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাসের জন্য আমাদের সঠিক নীতিমালা গ্রহণ ও এর বাস্তবায়ন, যথাযথ তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার খুবই জরুরি। এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে উদ্যোক্তা-ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক-গণমাধ্যম, গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট সকল স্টেক হোল্ডারদের সমন্বিত হয়ে কাজ করতে হবে।’

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ওসামা তাসীর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।  তিনি জানান, বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ১৮ শতাংশ হয়ে থাকে তৈরি পোশাক খাতে, যার আর্থিক মূল্য ৪৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমরা চীনের পরই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছি।  তৈরি পোশাক খাতের বৈশ্বিক বাজার ৪৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এ খাতের বৈশ্বিক মোট রপ্তানির ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাংলাদেশ হতে রপ্তানি হয়ে থাকে। এ খাতের শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, কমপ্লায়েন্স সম্পর্কিত ব্যয় বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বজারে পোশাক খাতের পণ্যের মূল্য কমে যাওয়া এবং পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য ক্রেতার ক্রমাগত চাপের ফলে বৈশ্বিকবাজারে আমাদের তৈরি পোশাক খাতের বাজার হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক খাতের সকল পণ্যের (প্রচলিত ও অপ্রচলিত) জন্য পাঁচ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করেন।  পাশাপাশি এ খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোরারোপের পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছরের জন্য জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নেরও আহ্বান জানান।

এক্ষেত্রে জ্বালানির উৎস হিসেবে গ্যাসের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা কমানো, স্থানীয় উৎস হতে কয়লা উত্তোলন ও ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়নের সর্বোপরি জ্বালানির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণের প্রস্তাব করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আরো জানান, কমপ্লায়েন্সের মান নিশ্চিত করতে না পারার কারণে গত চার বছরে প্রায় ১২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। টেকসই উন্নয়নের নিশ্চিতকরণের জন্য প্রধানত তিনটি পিকে (মানুষ, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ও মুনাফা) বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু ক্রেতারা প্রথম দুটিতে বেশি মাত্রায় গুরুত্বারোপ করলেও মুনাফা অর্জনের জন্য পণ্যের প্রয়োজনীয় দাম বাড়াতে আগ্রহী নন।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশে উৎপাদিত তৈরি পোশাকের দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ কম এবং পণ্যের কম মূল্যের কারণে এ খাতের উদ্যোক্তাদের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ২০১৩ সাল হতে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের দাম প্রতিবছর গড়ে শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে কমছে, উপরন্তু প্রস্তাবিত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পাবে ৬০ শতাংশ, যা পোশাক খাতের উৎপাদান ব্যয়কে প্রায় ৯ শতাংশ বৃদ্ধি করবে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, বেনজীর আহমেদ, বিজেএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ, পরিচালক মীরান আলী, ইনামুল হক খান, মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন, বিকেএমইএর প্রাক্তন সভাপতি ফজলুল হক প্রমুখ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ মে ২০১৯/নাসির/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়