ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খুলনার ৪ উপজেলার লক্ষাধিক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৬, ৩ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনার ৪ উপজেলার লক্ষাধিক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে

খুলনা অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা: সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার উপকূলবর্তী চার উপজেলার ১ লাখ ১১ হাজার পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। তবে ঝড়ের তীব্রতা শুরু না হওয়ায় আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। শুক্রবার বেলা ৩টায় জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে, ক্রমশ এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণি। শুক্রবার সন্ধ্যায় এর বাংলাদেশে হানা দেয়ার আশংকা রয়েছে। এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় নিচু এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।

শুক্রবার খুলনার উপকূলজুড়ে ঘুর্ণিঝড়ের আতঙ্ক থাকলেও জীবনযাত্রা থেমে নেই। তবে খুলনাঞ্চলের নদ-নদীতে বাড়ছে পানির উচ্চতা। সাথে সাথে বাড়ছে বতাসের তীব্রতাও।

অপরদিকে, দুপুর দেড়টায় জুম্মার নামাজের সময় হঠাৎ করে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত শুরু হলে মুসল্লিদের মধ্যে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তবে, দুপুরের পর থেকে খুলনাঞ্চলে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

জেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সদস্য, ত্রাণ শাখার প্রধান সহকারী শাহানা বেগম দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘খুলনার কয়রা উপজেলার ১১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫০ হাজারটি পরিবার, দাকোপ উপজেলার ৯৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫০ হাজারটি পরিবার এবং পাইকগাছা উপজেলার ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ হাজার ও বটিয়াঘাটা উপজেলার ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার পরিবারকে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। এসব উপজেলার অন্য বাসিন্দাদেরও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। তবে, ঝড়ের তীব্রতা শুরু না হওয়ায় আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্যরা অনেকেই কেন্দ্র থেকে বাইরে বেরিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। আবার নতুন করে অনেক পরিবার কেন্দ্রে আসছে।

দাকোপ উপজেলার ৪নং খোনা খাটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খোনা কে বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষদেরকে নিয়ে আসা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কয়রা ও পাইকগাছার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ আনা হচ্ছে ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায়। পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য চলছে মাইকিং।’

খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘দুপুরের দিকে কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। তবে, পর্যাপ্ত জায়গা, পানি, টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই আসতে চান না।’



খুলনা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণির সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে জেলায় ৩২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন। যারা আসতে চাচ্ছেন না স্থানীয় প্রশাসন তাদেরকে বুঝিয়ে আনছেন।’ তিনি জানান, কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছার বেশ কিছু দূর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

মোংলা বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নৌ) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশুর নদীর পানি প্রায় দুই ফুট বেড়েছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে নদীতে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের হোগলা, কয়রা ইউনিয়নের গোবরা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, উত্তর বেদকাশীর গাজীপাড়া, বিনাপানি, গাব্বুনিয়া, দক্ষিণ বেদকাশির জোড়শিং, চোরামুখা, আংটিহারা, গোলখালী, খাশিটানা, মহেশ্বরীপুরের সরদারঘাট, পাইকগাছা উপজেলার শিবসা পাড়ের গড়ইখালী ইউনিয়নটি গড়ইখালী, দাকোপের বাণিশান্তা, বাজুয়া, কামারখোলা, সুতারখালী, কালাবগী, নলিয়ান, জেলেখালী, জয়নগর, গুনারী, বটিয়াঘাটা উপজেলার শিয়ালীডাঙ্গা। এসব এলাকাজুড়ে আতংক বিরাজ করছে।’

বাগেরহাটের শরণখোলা, মোংলা ও মোড়েলগঞ্জের কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। একইভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার জেলেখালী, দয়ারঘাট, কেয়ারগাতি, চাকলা, বিছট, কাকবসিয়া, কোলা, হাজারাখালী, ঘোলা ত্রিমোহনী, হিজলিয়া, চন্ডিতলা ও বুধহাটার তেঁতুলতলা, দেবহাটা উপজেলার সুশীলগাতী, চরকোমরপুর, খারাট, টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা এবং শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ ও রমজাননগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে কারণে ঝুঁকিতে রয়েছেন এসব এলাকার মানুষ।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ‘শুক্রবার খুলনার আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলেও বাতাসের তীব্রতা কিছুটা বেড়েছে। মধ্যরাতে ফনি খুলনায় আঘাত হানতে পারে।

উল্লেখ্য, খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য বলা হচ্ছে। নৌকা, ট্রলারসহ ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেনা ও নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে খুলনার নয়টি উপজেলার সকল ইউনিয়নে একটি ও প্রতি উপজেলা সদরে পাঁচটিসহ মোট ১১৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মে ২০১৯/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়