ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে চামচঠোঁটি

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২২ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিলুপ্তির পথে চামচঠোঁটি

শামীম আলী চৌধুরী: চামচঠোঁটি পাখিটির দৈর্ঘ্য ১৭ সেন্টিমিটার। ডানা ১০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২ দশমিক ২ সেন্টিমিটার, ঠোঁটের চামচের মতো অংশ ১ দশমিক ১ সেন্টিমিটার, পা ২ দশমিক ১ সেন্টিমিটার ও লেজ ৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার। এর উপরের অংশের রঙ অনেকটা ফিকে ধূসর ও নিচের অংশটা সাদা। আকারে চড়ুই পাখির থেকেও ছোট।

ভেজা বালি-কাদার ওপরের স্তর থেকে এরা খাদ্য সংগ্রহ করে। এদের খাদ্যের তালিকায় আছে নানা জাতের অমেররুদণ্ডী প্রাণী। শেঁওলা বা খাটো উইলো গাছে ঢাকা প্রান্তরের মাটিতে ঘাস, পাতা, শেওলার বাসা বানিয়ে এগুলো ডিম পাড়ে। একসঙ্গে চারটি পর্যন্ত ডিম দেয়। ২০ দিনের মাথায় ডিম থেকে ছানা বের হয় এবং চার সপ্তাহের মাথায় ছানা বাসা ছেড়ে উড়তে শেখে। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে। এদের আবাসস্থল উত্তরপূর্ব রাশিয়া বিশেষত সাইবেরিয়াতে।

চামচঠোঁটি এক জাতের ছোট পাখি। সৈকতের কাদা-পানি হতে পোকা ধরার জন্য চডুই আকারের এ পাখিটির চঞ্চু চামচের মতো। এই পাখিটি সম্পূর্ণ পরিযায়ী ও উপকূলীয় পাখি। যার জন্য এর আরেক নাম সৈকত পাখি। লোকালয়ে এদের না আসার কারণ খাদ্যের অভাব। পাখিটি আমাদের দেশে প্রজনন করে না।



এই স্পুনবিল স্যান্ডপাইপার IUCN এর ভাষ্যমতে, পাখিটি ডেঞ্জার জোন বা লাল তালিকায় রয়েছে। কারণ এটি বিলুপ্তির পথে। সারা পৃথিবীতে এদের সংখ্যা মাত্র ১০০ জোড়ার মতো অর্থাৎ দুইশত। এরা মূলত আমাদের দেশে আসে খাদ্য গ্রহণের জন্য। শীত প্রধান দেশ যেহেতু তাদের বাসস্থান তাই শীতের সময় তাদের আবাসস্থলে পর্যাপ্ত খাবার পায় না। কারণ খাবারগুলো তখন বরফে আবৃত থাকে। তাই তারা শীতের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে চলে আসে। আসার পথে অনেক পাখি মারাও যায়। বাংলাদেশ ছাড়া মিয়ানমারেও এরা খাবারের জন্য তিন/চার মাস অবস্থান করে। এরা উপকূলে ভাটার সময় জেগে উঠা কাদা বালু বা মাটিতে তাদের ঠোঁট দিয়ে ড্রিল মেশিনের মতো অনবরত খুঁড়ে খাবার খুঁজে বের করে। পূর্ণ জোয়ারের সময় একটু উঁচু জায়গাতে বিশ্রাম করে। আর এই বিশ্রামের সময়টাতে তারা খাদ্য হজমের মাধ্যমে দেহে চর্বি সঞ্চয় করে ও শক্তি জোগায়।

পরিযায়ী পাখিগুলোকে কোনো অবস্থায় বিরক্ত করা ঠিক নয়। কারণ এরা ক্যালরি বা শক্তি অর্জন করতে না পারলে ফেরার সময় হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিতে গিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে মাঝপথে অনেক পাখি মারা যায়। আমি গত জানুয়ারি মাসে হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ও মার্চ মাসে মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে তাদের দেখা পাই। সংখ্যায় খুবই কম। নিঝুমদ্বীপে দেখা মিলে মাত্র তিনটি পাখির। আর সোনাদিয়া দ্বীপে দেখা মিলে মাত্র ৫ জোড়া অর্থাৎ ১০টি পাখির। যেহেতু এরা সংখ্যায় কম, তাই প্লোভার ও স্যান্ডপাইপারের দলে এদের দেখা যায়। এই পাখির স্বভাব চরিত্র না জানা থাকলে খালি চোখে খুঁজে বের করা খুবই দুষ্কর। 



ইংরেজি নাম: Spoon billed-Sandpiper.
বাংলা নাম: চামচঠোঁটি চা-পাখি/কোদাইল্লা চা-পাখি
বৈজ্ঞানিক নাম: Eurynorhynchus pygmeus.

ছবি: লেখক



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মে ২০১৯/হাসনাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়