ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অর্থনীতি সমিতির সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকার ছায়া বাজেট

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ২৫ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অর্থনীতি সমিতির সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকার ছায়া বাজেট

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকার ছায়া বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, যা আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রীর আভাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। আগামী ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার আভাস দিয়েছেন।

শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত প্রস্তাবনাগুলো উপস্থাপন করেন।

রাজস্ব আহরণের তিনটি নতুন উৎস দেখানো হয়েছে প্রস্তাবনায়। যেখান থেকে সরকার মোট ৯৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারেন।

অর্থপাচার রোধ, কালো টাকা উদ্ধার ও সম্পদ করসহ রাজস্ব আদায়ের আরো নতুন উৎস দেখিয়ে আবুল বারকাত বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের ২০টি নতুন উৎস নির্দিষ্ট করেছি, যা আগে ছিল না।’

২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ঘাটতির এই বিকল্প বাজেটে অর্থায়নে কোনো বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না দাবি করে আগামী ৩ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৫ লাখ ভ্যাট লাইসেন্সধারীকে ভ্যাটের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছে অর্থনীতি সমিতি।

অর্থনীতি সমিতি তাদের প্রস্তাবিত বিশাল বাজেটে রাজস্ব আয় ধরেছে ১০ লাখ ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর ও ৩১ শতাংশ পরোক্ষ কর। মোট বাজেট বরাদ্দের প্রায় ৮১ শতাংশের জোগান আসবে রাজস্ব আদায় থেকে।

খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গে বারকাত করেন, ‘অভ্যাসগত ঋণ খেলাপিদের মোকাবিলার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে তাদের পূর্ণোদ্যমে চালু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ঠিক হবে না। সমস্যাটি জটিল, তবে সমাধান সম্ভব বলে মনে করি।’

বিকল্প বাজেটে খাতওয়ারি বরাদ্দে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে মোট ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখছে অর্থনীতি সমিতি। এরপর রয়েছে জনপ্রশাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাত।

কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে ১ লাখ ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ২ লাখ বিঘা খাস জমি বন্দোবস্ত এবং ২০ হাজার জলাহীন প্রকৃত মৎস্যজীবী পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার বিঘা খাস জলাশয় বন্দোবস্ত দেওয়ার সুপারিশ করেছে সমিতি।

কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দিয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক বারকাত বলেন, ‘দেশে প্রতিবছর ৩০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু তার মধ্যে ২০ লাখ মানুষেরই কর্মসংস্থান হয় না। কর্মসংস্থান বাড়ানো ও বেকারত্ব কমাতে “জাতীয় কর্মসংস্থান পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কোষ” গঠন, যুবকদের উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক হতে উৎসাহিত করতে স্টার্ট আপ পুঁজি সরবরাহ এবং শিক্ষাখাতে জিডিপির কমপক্ষে ৫% বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।’

তামাকে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘তামাকের ওপর শুল্কারোপের ক্ষেত্রে কয়েক স্তরবিশিষ্ট মূল্যস্তর বাতিল করে প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের ওপর কমপক্ষে ৬০ টাকা আবগারি শুল্ক, প্রতি ২৫ শলাকার বিড়ির ওপর ১৫ টাকা আবগারি শুল্ক, আর প্রতি ১০০ গ্রাম ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের ওপর ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করা হোক।’

নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে দরিদ্র নারীদের সরকারিভাবে ক্ষুদ্র-অনুদান, প্রশিক্ষণ, গার্মেন্টসসহ কর্মজীবী নারীদের আবাসন ও ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন, একশ ভাগ নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ ৪ গুণ বাড়ানো, ক্রীড়া খাতে নারীদের জন্য বরাদ্দ ৪ গুণ বাড়ানো, মাধ্যমিক স্কুলে মেয়েদের বিজ্ঞান শিক্ষায় বরাদ্দ ৩ গুণ বাড়ানো এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বরাদ্দ ৩০ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে অর্থনীতি সমিতি।

তাদের আরো কয়েকটি সুপারিশ হচ্ছে- ব্যক্তি পর্যায়ে করহার কমানো, বছরে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা আয়কর দেওয়ার যোগ্য মানুষের সংখ্যা ৫০ হাজারে বাড়ানো, প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট উপখাতভিত্তিক কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা ইত্যাদি।

স্বাগত বক্তব্যে অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিকল্প বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ফল। তাও সমিতির গুটিকয়েক ব্যক্তির। আর সরকার যে খসড়া বাজেট আগামী জুন মাসে সংসদে উত্থাপন করবে, তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দেশি-বিদেশি পরামর্শকসহ কয়েক হাজার কর্মকর্তার যৌথ কর্মকাণ্ড।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৯/এম এ রহমান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়