ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৪৮তম বাজেট বৃহস্পতিবার

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ১২ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৪৮তম বাজেট বৃহস্পতিবার

কেএমএ হাসনাত : বৃহস্পতিবার দেশের ৪৮ তম বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি হবে তার প্রথম বাজেট। সংগত কারণে এবারের বাজেট নিয়ে দেশবাসীর আগ্রহটা একটু বেশি থাকবে। এটি হবে বিভিন্ন মেয়াদে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯তম বাজেট।

নতুন বাজেট পাশ হলেই বিগত সরকারের দেওয়া ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট শেষ হবে, আর শুরু হবে নতুন সরকারের প্রথম বাজেট।

সাধারণত ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত একটি অর্থবছর ধরা হয়। সরকারের আর্থিক আয়-ব্যয়ের হিসাব সংবলিত এই বাজেটে থাকে অনেক হিসাব নিকাশ।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার টানা দুই মেয়াদে অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০টি বাজেট দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।  টানা ১০টি বাজেটসহ এর আগে এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি আরো ২টি বাজেট জাতিকে উপহার দেন।

এর আগে দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার রাজনীতির মাঠে একাই ছিল। মাঠে কোন প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় বাজেটের ভুলত্রুটি তুলে ধরার তেমন কোনো প্রতিপক্ষও ছিল না। বিশেষ করে বাজেটকে ঘিরে পণ্যসামগ্রীর দাম না বাড়ায় বাজেট নিয়ে তেমন কোনো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। এবার জাতীয় পার্টি পরিপূর্ণ বিরোধীদলের  ভূমিকায়। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণফোরাম এবং বিএনপির প্রতিনিধি এবার সংসদে রয়েছে। কাজেই বিগত সময়ের চেয়ে এবারের বাজেট অধিবেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বাজেটের আকার হতে পারে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ কোটি টাকার। দিন যত যাচ্ছে বাজেটের আকার ততই বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা।

১৯৭১ সালের নয় মাসের রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে ১৬ ডিসেম্বর  দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং তার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। এরপর দেশে ১০ জন অর্থমন্ত্রী ৪৭টি বাজেট দিয়েছেন, এবার নিয়ে জাতি ৪৮টি বাজেট পাচ্ছে।

১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ জাতীয় সংসদে প্রথমটিসহ মোট ৩টি বাজেট ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক সরকার এবং তাদের ছত্র-ছায়ায় বেশ কয়েকটি সরকার দেশ শাসন করেছে। এ সময় দেশে জাতীয় সংসদ সচল ছিল না। সামরিক সরকারগুলো অধ্যাদেশ আকারে বাজেট পেশ করে।

সরকারি তথ্য থেকে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে অবৈধভাবে নির্বাচিত সরকার উৎখাতের পর ১৯৭৫-১৯৭৬ অর্থবছর ড. আজিজুর রহমান অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট ঘোষণা করেন। এরপর সামরিক শাসক মেজর জেনারেল পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেলর জিয়াউর রহমান ২টি এবং তিনি প্রহসনের হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ারা পর আরো একবারসহ মোট ৩টি বাজেট ঘোষণা করেন। ড. এম এন হুদা একবার, এরপর ১৯৮০-১৯৮১ ও ১৯৮১-১৯৮২ অর্থবছর পরপর দুইবার সাইফুর রহমান বাজেট ঘোষণা করেন। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তার শাসনামলে ১৯৮২ সালে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৮৩-১৯৮৩ ও ১৯৮৩-১৯৮৪ দুই অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। ১৯৮৪-১৯৮৫ অর্থবছর থেকে ১৯৮৭-১৯৮৮ অর্থবছর পর্যন্ত পরপর ৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন এম. সায়েদুজ্জামান। ১৯৮৮-১৯৮৯ এবং ১৯৯০-১৯৯১ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম দুইবার। এর মাঝে ১৯৮৯-১৯৯০ ড. ওয়াহিদুল হক বাজেট পেশ করেন।

১৯৯১ সালে এইচএম এরশাদকে স্বৈচারার সরকার আখ্যায়িত করে পতন ঘটানোর পর তত্বাবধায়ক  সরকারের প্রবর্তন হয়। ওই সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে এম. সাইফুর রহমান আবার অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ১৯৯১-১৯৯২ অর্থবছর থেকে ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৫টি বাজেট পেশ করেন।

মাগুরা নির্বাচন কেলেঙ্কারি বিরুদ্ধে গড়ে উঠা আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকারের পতনের পর তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় এবং এসএএমএস কিবরিয়া অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৯৬-১৯৯৭ অর্থবছর থেকে ২০০১-২০০২ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ৬টি বাজেট পেশ করেন।

২০০১ এর নির্বাচনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করে। এম. সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে ২০০০-২০০১ অর্থবছর থেকে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর পর্যন্ত ৪টি বাজেট পেশ করেন। বিরোধীদলের আন্দোলনের মুখে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। সামরিক বাহিনী সমর্থনপুষ্ট ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়ে ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ২০০৭-২০০৮ ও ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতা লাভ করলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপান আবু মাল আবদুল মুহিত। তিনি ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ১০টি বাজেট পেশ করেন।  বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের এবং দেশের ৪৮ তম  বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন।

নিচে বিভিন্ন অর্থবছরের বাজেটের আকার ও প্রস্তাবকারী অর্থমন্ত্রীর তালিকা তুলে ধরা হলো-

১৯৭২-১৯৭৩ তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকা

১৯৭৩-১৯৭৪ তাজউদ্দীন আহমদ ৯৯৫ কোটি টাকা

১৯৭৪-১৯৭৫ তাজউদ্দীন আহমদ ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা

১৯৭৫-১৯৭৬ ড. আজিজুর রহমান ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা

১৯৭৬-১৯৭৭ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা

১৯৭৭-১৯৭৮ লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান ২১৮৪ কোটি টাকা

১৯৭৮-১৯৭৯ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা

১৯৭৯-১৯৮০ ড. এম এন হুদা ৩৩১৭ কোটি টাকা

১৯৮০-১৯৮১ এম সাইফুর রহমান ৪১০৮ কোটি টাকা

১৯৮১-১৯৮২ এম সাইফুর রহমান ৪৬৭৭ কোটি টাকা

১৯৮২-১৯৮৩ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪৭৩৮ কোটি টাকা

১৯৮৩-১৯৮৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫৮৯৬ কোটি টাকা

১৯৮৪-১৯৮৫ এম সায়েদুজ্জামান ৬৬৯৯ কোটি টাকা

১৯৮৫-১৯৮৬ এম সায়েদুজ্জামান ৭১৩৮ কোটি টাকা

১৯৮৬-১৯৮৭ এম সায়েদুজ্জামান ৮৫০৪ কোটি টাকা

১৯৮৭-১৯৮৮ এম সায়েদুজ্জামান ৮৫২৭ কোটি টাকা

১৯৮৮-১৯৮৯ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১০৫৬৫ কোটি টাকা

১৯৮৯-১৯৯০ ড. ওয়াহিদুল হক ১২৭০৩ কোটি টাকা

১৯৯০-১৯৯১ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১২৯৬০ কোটি টাকা

১৯৯১-১৯৯২ এম সাইফুর রহমান ১৫৫৮৪ কোটি টাকা

১৯৯২-১৯৯৩ এম সাইফুর রহমান ১৭৬০৭ কোটি টাকা

১৯৯৩-১৯৯৪ এম সাইফুর রহমান ১৯০৫০ কোটি টাকা

১৯৯৪-১৯৯৫ এম সাইফুর রহমান ২০৯৪৮ কোটি টাকা

১৯৯৫-১৯৯৬ এম সাইফুর রহমান ২৩১৭০ কোটি টাকা

১৯৯৬-১৯৯৭ এসএএমএস কিবরিয়া ২৪৬০৩ কোটি টাকা

১৯৯৭-১৯৯৮ এসএএমএস কিবরিয়া ২৭৭৮৬ কোটি টাকা

১৯৯৮-১৯৯৯ এসএএমএস কিবরিয়া ২৯৫৩৭ কোটি টাকা

১৯৯৯-২০০০ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৪২৫২ কোটি টাকা

২০০০-২০০১ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৮৫২৪ কোটি টাকা

২০০১-২০০২ এসএএমএস কিবরিয়া ৪২৩০৬ কোটি টাকা

২০০২-২০০৩ এম সাইফুর রহমান ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা

২০০৩-২০০৪ এম সাইফুর রহমান ৫১৯৮০ কোটি টাকা

২০০৪-২০০৫ এম সাইফুর রহমান ৫৭২৪৮ কোটি টাকা

২০০৫-২০০৬ এম সাইফুর রহমান ৬১০৫৮ কোটি টাকা

২০০৬-২০০৭ এম সাইফুর রহমান ৬৯৭৪০ কোটি টাকা

২০০৭-২০০৮ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

২০০৮-২০০৯ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

২০০৯-২০১০ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা

২০১০-২০১১ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৩২,১৭০ কোটি টাকা

২০১১-২০১২ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৬৫,০০০ কোটি টাকা                                 

২০১২-২০১৩ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা

২০১৩-২০১৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা

২০১৪-২০১৫ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।

২০১৫-২০১৬ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা

২০১৬-২০১৭ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

২০১৭-২০১৮ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা

২০১৮-২০১৯ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা

২০১৯-২০২০ আ হ ম মুস্তফা কামাল 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ জুন ২০১৯/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়