পুঁজিবাজার : করের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার আশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর রিটেইনড আর্নিংস ও রিজার্ভের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে এ আশ্বাস দেন তিনি।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা ইউএনসিটিএডি কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিস্তারিত তুলে ধরতে মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পুঁজিবাজারের জন্য যেসব প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন, তার একটি বাজারের জন্য নেতিবাচক বলে বিবেচিত হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার দিলে তার ওপর ১৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করেছেন তিনি। এতে কোম্পানিগুলো নগদে লভ্যাংশ বিতরণ করবে বলে মনে করে সরকার।

কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত মুনাফা বা রিটেইনড আর্নিংস বা রিজার্ভের ওপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি রিজার্ভ থাকলে যতটুকু বেশি তার ওপর ধার্য হবে এই কর। এই প্রস্তাবের কারণে বহু কোম্পানি বিপাকে পড়বে। এমনকি বছরে মুনাফার চেয়ে বেশি চলে যাবে কর পরিশোধে, যার মধ্যে সালমান এফ রহমানের তিনটি কোম্পানি বেক্সিমকো, বেক্সিমকো ফার্মা এবং বেক্সিমকো সিনথেটিকসও আছে।

অর্থমন্ত্রী বাজেটে প্রণোদনার কথা জানালেও বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে বাজারে নেতিবাচক হাওয়া, যদিও আশা করা হচ্ছিল, এবার বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। এর অন্তর্নিহিত কারণ হিসেবে রিজার্ভের ওপর করারোপের প্রস্তাবকেই কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

সালমান এফ রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘অনেক জায়গা থেকে আমাদের বলা হয়েছে। এটা সিরিয়াসলি আমরা কনসিডার করছি। এখানে দুটো জিনিস। একটা হলো রিটেইনড আর্নিংসের ওপর ট্যাক্স। এচকুয়ালি এটা ডাবল ট্যাক্স হয়ে যাচ্ছে। রিটেইনড আর্নিংস অলরেডি ট্যাক্স পেইড। এটা পয়েন্ট আউট করা হয়েছে। রিটেইনড আর্নিংয়ের ওপর কর আরোপ করা হলে তা ডাবল করে রূপান্তরিত হবে, যা কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। ফলে চূড়ান্ত বাজেটের আগে সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্সে করতে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটা করা হলে ডুইং বিজনেসে আরো পাঁচ ধাপ পিছিয়ে যাব। এ বিষয়গুলো এনবিআরের কাছে তুলে ধরতে হবে।’

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ২৫১ কোটি ১৬ লাখ ডলার । ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। সে হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। পাশের দেশ ভারতে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিলো ৩ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ২২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে ৬ শতাংশ।

মালদ্বীপে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৯ কোটি ২৭ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৫৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১২ শতাংশ। নেপালে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১২ কোটি ৯২ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে বিনিয়োগ হয় ১৬ কোটি ৮ লাখ ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ২৪ শতাংশ। পাকিস্তানে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৩২৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ হয় ২৩৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৩৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ হয় ১৬১ কোটি ৫ লাখ ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১৭ শতাংশ। ভুটানে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৯৯ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৫৯ লাখ ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৬০ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৯/হাসিবুল/রফিক