ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাজেট সংশোধনের দাবি এফবিসিসিআইএর

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ২৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাজেট সংশোধনের দাবি এফবিসিসিআইএর

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ভ্যাট, আয়কর এবং আমদানি শুল্ক হারে বেশকিছু সংশোধনের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় সংগঠনটি এ দাবি জানায়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব টিপু মুনশি।  এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: মুনতাকিম আশরাফ এবং সহ-সভাপতি মো: সিদ্দিকুর রহমান, জনাব রেজাউল করিম রেজনু ও মীর নিজামউদ্দিন প্রমুখ।

বাংলাদেশের বাজেট ইতিহাসে ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীরা এধরনের ব্যবসা সহায়ক বাজেট আগে কখনো পায়নি জানিয়ে সভায় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জনমুখী ও ব্যবসা-সহায়ক জাতীয় বাজেট প্রণয়নের জন্য এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শিল্পখাতে বিনিয়োগ, উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানিমূখী শিল্পের বহুমূখী প্রসার, প্রণোদনা ও অধিক প্রতিযোগিতা সক্ষম করাকে বাজেটে উন্নয়ন কৌশল হিসাবে নেয়া হয়েছে যা ইতিবাচক। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মানবসম্পদ, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূসকসহ সকল ধরনের কর অব্যাহতি দিয়েছেন যা আগে ছিল ৩০ লক্ষ টাকা।  কিন্তু ২৮ হাজার টাকা প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় এবং ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্ণওভারের আওতায় আনা হয়েছে যা পূর্বে ছিল ৮০ লক্ষ টাকা।

তবে সংগঠনটির সভাপতি অভিযোগ করেন, অহরহ এ সুবিধার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন চেম্বার ও এসোসিয়েশন থেকে জানা যাচ্ছে যে, মাঠ পর্যায়ে কর কর্মকর্তারা বিভিন্ন কৌশলে-অপকৌশলে ব্যবসায়ীদের হয়রানী করার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষনা করেছেন, সুতরাং সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোন পদক্ষেপ নেয়ার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চেম্বার/এসোসিয়েশন এবং এফবিসিসিআইকে অবহিত করতে হবে।

এফবিসিসিআই অধিভূক্ত ১০৬টি চেম্বার, ৪০০টি এসোসিয়েশন এবং অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে এফবিসিসিআই এর বাজেট পরবর্তী মূল্যায়ন করা হয়েছে।

এফবিবিসিআই সভাপতি বলেন, ‘গত ১৪ মে মতবিনিময় সভায় মূসক ও করের হার বৃদ্ধি না করে আওতা বৃদ্ধি করার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী জনাব আ.হ.ম মুস্তফা কামাল আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন। এছাড়াও বাজেট পূর্ববর্তী বিভিন্ন সভা ও সেমিনারে কর বৃদ্ধি না করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে তা পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন শেখ ফাহিম এবং এফবিসিসিআই এর অধিভূক্ত সকল বানিজ্য সংগঠনকে সাথে নিয়ে মূসক আইন বাস্তবায়নে সরকারকে সার্বিক সহযোগিতার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বলেন, এ ধরনের সহযোগিতা দৃষ্টান্ত ইতিমধ্যোই প্রতিফলিত হয়েছে, বাংলাদেশ জুয়েলারী এসোশিয়েশন স্বর্ণ মেলার মাধ্যেমে শুধুমাত্র ঢাকায় ১২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরিত হয়েছে।’

সরকার ও বেসরকারি খাতের পার্টনারশীপ ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব বলে মত এফবিসিসিআইয়ের।

প্রস্তাবিত বাজেটের প্রাথমিক প্রতিত্রিুয়ার ফলশ্রুতিতে, এফবিসিসিআই অধিভুক্ত চেম্বার, এসোসিয়েশন ও অর্থনীতিবিদ একসাথে প্রস্তাবিত বাজেট এবং অর্থবিল পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে জানান শেখ ফাহিম। বাজেটে শিল্প ও বিনিয়োগ সহায়ক ইতিবাচক উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু বিষয়ের প্রস্তাবনা করা হয়েছে যা পুর্নবিবেচনার জন্য আহবান জানান তিনি। এগুলো হোল, শিল্পের সকল কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি থেকে আগাম কর প্রত্যাহার। যোগানদারের ক্ষেত্রে মূসক ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এর পরিবর্তে ৫ শতাংস করা, যেহেতু টার্ণওভার সীমা ৩ কোটি টাকা করা হয়েছে, উৎসে কর কর্তনকারী স্বত্তা/প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্ণওভারের সীমা ১ কোটি টাকার পরিবর্তে ৩ কোটি টাকা করার দাবি এফবিসিসিআইয়ের।

কর কর্মকর্তার জব্দকরন ও আটক করার স্বেচ্ছা ক্ষমতা ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার ক্ষমতা বাতিল চেয়েছে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ  এ সংগঠন।

৫শতাংশ, ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১০ শতাংশ মূসক প্রদানকারীগণের ক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত নেয়ার সুযোগ প্রদান, পৃথক নিবন্ধনের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের বিধান করা, আপিলের প্রতি স্তরের পরিবর্তে শুধুমাত্র প্রথম স্তরে দাবির ১০ শতাংশ জমা দেয়া, বিচার চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত একবারই ডাউনপেমেন্ট প্রদান যৌক্তিক বলে মনে করে এফবিসিসিআই।

আইন প্রতিপালনে অনিয়মে জরিমানার হার ১০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।  এক্ষেত্রে এফবিসিসিআই এই জরিমানার হার পূর্বের মত বহাল রাখা, মাঠ পর্যায়ে মূল্য ঘোষনার জটিলতার জন্য 'মূসক-৪ দশমিক ৩ এর মূল্য সংক্রান্ত কলাম- ৭, ১০ ও ১১ এবং এর বিশেষ দ্রষ্টব্য-২ বাদ দিয়ে ফরমটি সংশোধন করার দাবি করে।

কোম্পানীর ক্ষেত্রে কর্পোরেট কর হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করা, তৈরিপোষাক ও বস্ত্র খাতের মত অন্যান্য রপ্তানী খাতেও একই রকম কর্পোরেট কর হার করা, প্রাপ্ত নগদ ভর্তুকির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ বহাল রাখার পক্ষে এফবিসিসিআই।

তৈরিপোষাকসহ সকল রপ্তানী খাতে একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান, স্টক ডিভিডেন্ট এর উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর সম্পূর্ন প্রত্যাহার, রিটেইন্ড আরনিং,  রিজার্ভ এর উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর সম্পূর্ন প্রত্যাহার চায় এফবিসিসিআই।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রীম আয়কর হার ২০১২ সাল থেকে মূল্যস্ফিতির হার বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারন করা, শিল্পের কাঁচামালের উপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, সকল রপ্তানি আয়ের উৎসে ন্যূনতম করহার ০ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০ দশমিক ২৫ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয় মূল্যায়ন সভায়।

মধ্যম আয়ের দেশ ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের লক্ষ্যকে বিবেচনায় নিয়ে রেভিনিউ রেগুলেটরি ফেমওয়ার্ক গঠন করার পরামর্শ ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুন ২০১৯/নাসির/ সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়