ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাল্যবিবাহকে লাল কার্ড

শাহনেওয়াজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাল্যবিবাহকে লাল কার্ড

সাধারণত খেলা, বিশেষ করে অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে খেলোয়াড়কে লাল রঙের কার্ড দেখানো হয় খেলার মাঠে অসদাচরণের কারণে। লাল কার্ডের অর্থ সেই খেলায় খেলোয়াড় আর অংশ নিতে পারবেন না, তাকে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। এটি দেখান খেলার পরিচালক অর্থাৎ রেফারি। সেই লাল কার্ড আজ আমাদের দেশের সমাজে কিশোরী মেয়েদের হাতে উঠে এসেছে জীবনের মাঠ থেকে বাল্যবিবাহকে বিদায় করে দেওয়ার জন্য। 

খবরটি গত সোমবার (২৩ জানুয়ারি ২০১৭) রাইজিংবিডি ডটকমে প্রকাশ হয়েছে ‘বাল্যবিবাহকে লাল কার্ড দেখালো লাখো শিক্ষার্থী’ শিরোনামে। কিশোরী মেয়েরা অর্থাৎ বালিকারা সমবেত হয়ে লাল কার্ড দেখিয়েছে সমাজের ঘুণ সরানোর লক্ষ্য সামনে রেখে। এই বালিকা সমাবেশের আয়োজন করা হয় সুনামগঞ্জে। জেলার ২৯৯টি জায়গায় একই সময়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং ১ লাখ ১৪ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষার্থী এতে যোগ দেয়। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে তারা একযোগে বাল্যবিবাহকে লাল কার্ড প্রদর্শন করে। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয় আয়োজন এবং সচেতনতা সৃষ্টির সুন্দর কৌশল। 

সমাবেশের মূল আয়োজন করা হয় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের শহীদ আবুল হোসেন মিলনায়তনে। সেখানে সুনামগঞ্জ জেলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি জায়গায় এই সমাবেশে অভিভাবক, জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। ‘থাকলে শিশু বিদ্যালয়ে, হবে না বিয়ে বাল্যকালে’, ‘থাকলে শিশু লেখাপড়ায়, সফল হবে জীবন গড়ায়’ এই স্লোগানে বাল্যবিবাহকে ‘না’ করে দেন প্রত্যেক মানুষ।

সামাজিক জীবনে বিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এর জন্য প্রাকৃতিকভাবে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি অত্যাবশ্যক। শারীরিক ও মানসিকভাবে উপযুক্ত ও তা সুগঠিত হওয়ার পরই বিয়ে করা উচিত। স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনুযায়ী, স্বাভাবিক পুষ্টি নিয়ে বেড়ে উঠলে মানুষ গড়ে ১৮ বছর বয়স নাগাদ শারীরিক ও মানসিকভাবে উপযুক্ত হয় এবং স্বতন্ত্রভাবে জীবন পরিচালনায় সক্ষমতা অর্জন করে। তাই দেশে দেশে ১৮ বছর বয়সকে মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে দেখা হয়েছে।

আমাদের দেশে বিয়ের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২১ বছর আর নারীর জন্য ১৮ বছর নির্ধারণ করে আইন হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, ২১ বছরের আগে ছেলেদের প্রজনন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিপক্ব হয় না। আর ১৮ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়েদের ইউটেরাস, ওভারি, পেলভিস পরিপক্ব হয় না। উভয়ের ক্ষেত্রেই এই সময়ের আগে বিয়ে হলে প্রজনন স্বাস্থ্য হুমকির সন্মুখীন হতে পারে এবং সন্তান নেওয়ার সময় মেয়েদের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।

একটি সুঠাম সমাজের জন্য প্রয়োজন সুস্থ নাগরিক। আর সুস্থ নাগরিকের কল্যাণেই আসতে পারে সুস্থ সবল প্রজন্ম। বাল্যবিবাহ নাগরিক স্বাস্থ্য ও সুস্থ সমাজের জন্য অন্তরায়। বাল্যবিবাহ রোধ করার জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। এ জন্য সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নিতে হবে ব্যাপক পদক্ষেপ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জানুয়ারি ২০১৭/শাহনেওয়াজ/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়