ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অনিয়ম হয়রানি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ১১ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অনিয়ম হয়রানি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিন

বেশি বেতনের চাকরিতে উন্নত জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন ২৮ বছরের মোহাম্মদ জীবন। স্বপ্ন পূরণে তুরস্কে যেতে আন্তর্জাতিক একটি চক্রের দেশীয় এজেন্টদের হাতে তুলে দেন প্রায় ছয় লাখ টাকা। কিন্তু বিদেশে না পাঠিয়ে তার পুরো টাকাই আত্মসাৎ করে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এ ঘটনায় দিশেহারা নোয়াখালীর কবিরহাটের মোহাম্মদ জীবন মামলা করেন রাজধানীর শাহবাগ থানায়। সম্প্রতি এ ঘটনায় মানব পাচারকারী চার সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে র‌্যাব-৩।

বিদেশে জনশক্তি রফতানির প্রক্রিয়ায় যে কত রকম অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়, সাধারণ নিরীহ মানুষকে ঠকিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে দেশি-বিদেশি চক্র এ ঘটনা তার একটি উদাহরণ মাত্র। এরকম প্রচুর অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। এদের দৌরাত্ম্য যে কতটা প্রকট, তা সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।

টিআইবির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভিসা কেনাবেচা আর ধাপে ধাপে দালালদের কারণে তিন থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে বিদেশগামীদের। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে যেতে আগ্রহী পুরুষদের ৯০ শতাংশই দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হচ্ছেন। আর ভিসা বা চাহিদাপত্র কিনতে শুধু ২০১৬ সালেই ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

সরকারি হিসাবে, বিদেশে জনশক্তি রফতানি বাড়ছে। বর্তমানে দেশের বাইরে কর্মরত আছেন ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বাংলাদেশি। ২০১৬ সালে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। গত আট বছরের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার এখনও ঊর্ধ্বমুখী। এ বছরের প্রথম দুই মাসেই ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭২ জন কর্মী বিদেশে গেছেন, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। তবে কর্মী বেশি গেলেও এই খাতের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ হয়নি। যার ফলে প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর হার বাড়লেও গত বছর থেকে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে আসছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

জনশক্তি রফতানি খাতে দুর্নীতি ও শ্রমিক হয়রানির এসব ঘটনা খুবই উদ্বেগের। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম এ খাতে এরকম অনিয়ম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এসব বিষয় দেখভাল করার কথা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ করার বিষয়ে ভাবতে হবে। দালালদের দৌরাত্ম্য যেন কমে আসে সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কর্মীর চাহিদা রয়েছে। তারা ভালো কাজ করছেন, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে উপার্জনের বেশিরভাগ অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। অনেকেই এ অর্থ বিনিয়োগ করছেন। একই সঙ্গে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বাড়ছে। প্রবাসে যাওয়ার ব্যয় কমাতে সরকারের অঙ্গীকারের অভাব নেই এবং এ জন্য অনেক আইন-কানুনও প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। হয়রানি বন্ধ করতে সরকারকে জরুরিভিত্তিতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রবাসী আয়ের খাতকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে হলে শ্রমিক ও বিদেশ গমনেচ্ছুদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। তারা যেন সহজে ও কম খরচে বিদেশে গিয়ে ভালো কাজ পান তার নিশ্চয়তা জরুরি। একই সঙ্গে তারা যেন সহজে বৈধ মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতে পারেন সে ব্যাপারে তাদের অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি নিশ্চয়তাও দিতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ মার্চ ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়