ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মহান মে দিবস

শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রেরণা

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রেরণা

মহান মে দিবস আজ। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় দিন। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালের পয়লা মে বুকের রক্ত দিয়ে নিজেদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। মালিকপক্ষ ন্যায্য মজুরি ও দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সীমা মেনে নিতে বাধ্য হয়। শ্রমিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই সেদিন মালিকরা স্বীকার করে নিয়েছিলেন শ্রমিকরাও মানুষ। তারা যন্ত্র নয়, তাদেরও বিশ্রাম ও বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে।

এরপর অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সব দেশেই আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। আমরা বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বের শ্রমজীবী মানুষকে মে দিবসের সংগ্রামী অভিবাদন জানাই।

এই দিবস এখন শুধু শ্রমিক ও সমাজতন্ত্রীদের নয়, বিশ্বজনীন। বিশ্বজুড়ে সমাজবাদী চেতনার বিকাশ ঘটিয়েছে এই দিবস। পুঁজিবাদের মানবিক বিকাশেও মে দিবসের অবদান অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের ঠকিয়ে কিংবা তাদের শোষণ ও নিপীড়ন করে পুঁজির সুষ্ঠু বিকাশ যে সম্ভব নয় সে বাস্তবতা এখন পুঁজিবাদীরাও স্বীকার করেন।

শিকাগো শহরের শ্রমিকেরা আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে সংগ্রাম করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন। সেই ঐতিহাসিক দিবস শ্রমিকদের মধ্যে সংহতি বৃদ্ধি ও শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রেরণা জুগিয়ে এসেছে। মে দিবসের পথ ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের অধিকার, বিশেষ করে মজুরি, কাজের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা—এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

তবে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে তার প্রতিফলন কম। অনেক মালিক শ্রম আইনের তোয়াক্কা করেন না। শ্রমিকদের বাড়তি সময় কাজ করিয়ে নিলেও প্রাপ্য মজুরি দেন না। আবার কর্মক্ষেত্রে রয়েছে অনিশ্চয়তা। রয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকিও। মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের কারণে গার্মেন্ট শিল্পের অনেক শ্রমিককে চাকরি হারাতে হয়। আবার রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর দেশের গার্মেন্ট শিল্পের কর্মপরিবেশ কিছুটা উন্নত হলেও এখনো তা আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি নয়। দেশের অর্থনীতির বিকাশে যারা অনন্য অবদান রাখছেন তাদের মর্যাদা আমাদের সমাজে প্রশ্নবিদ্ধ।

পয়লা মে সারা পৃথিবীতে বঞ্চনা ও শোষণ থেকে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এসেছে। এই দিবস পালন তখনই সার্থক হবে, যখন দেশের শ্রমজীবী মানুষ ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মস্থলের নিশ্চয়তা পাবেন। মালিকদের উপলব্ধি করতে হবে শ্রমিকদের ঠকিয়ে শিল্পের বিকাশ বা মুনাফা আদায় করা যাবে না। দেশের অগ্রগতির স্বার্থে উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সুষ্ঠু সম্পর্কের প্রয়োজন।

আমরা চাই শ্রমিকদের ওপর যে শোষণ ও বঞ্চনা চলছে, তার অবসান হোক। তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।  শ্রম আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন হলে দেশে শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থ ও অধিকার নিশ্চিত হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ মে ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়