ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শ্রমিকের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৭, ৪ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর হবে

কর্মজীবী মানুষের অবসরের পর আর্থিক নিশ্চয়তার অন্যতম উৎস প্রভিডেন্ট ফান্ড (ভবিষ্য তহবিল)। ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য এটি একান্ত প্রয়োজন। অবসরের পর একটা বিরাট অঙ্কের টাকা হাতে আসলে নিরুদ্বেগ জীবন কাটাতে সহজ হয় অবসরে যাওয়া ব্যক্তির। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য দীর্ঘদিন যাবত এই প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু আছে।

কিন্তু দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাধারণ মানুষ যেমন- কৃষক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিতরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সরকার এখন তাদেরও প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন হওয়ায় সরকার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বা দিনমজুরদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় আনতে উদ্যোগী হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৬০টি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবী মানুষের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করছে সরকার। ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের ভবিষ্যত তহবিল নীতিমালা ২০১৭’ এর আওতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

সাধারণত, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর মানুষ তার কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে। তখন তার নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নেওয়া ও স্বচ্ছন্দ জীবন কাটানো জরুরি। এ জন্য প্রয়োজন আর্থিক নিরাপত্তা। কিন্তু অনেক নিম্নশ্রেণীর পেশাজীবী শ্রমিককে বার্ধক্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হয়। স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হয় তাদের। বর্তমান সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর হবে।

‘অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারী-পুরুষ সবার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন এ তহবিল পরিচালনা করবে। তহবিলটি ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ বছর মেয়াদি হবে। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে শ্রমিকের অংশ, ফাউন্ডেশনের অংশ, সঞ্চয়ী প্রতিষ্ঠানের মুনাফাসহ জমাকৃত পুরো অর্থের ওপর বিভিন্ন হারে মুনাফা বা ইনসেনটিভ দেওয়া হবে।

প্রভিডেন্ট ফান্ডে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা নানা ধরনের অর্থিক সুবিধা পাবেন। কোনো কারণে মানসিক বা দৈহিকভাবে অক্ষম হলে তাকে দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে। কোনো শ্রমিক মারা গেলে তার নমিনিকে দেওয়া হবে দুই লাখ টাকা। অংশগ্রহণকারী প্রভিডেন্ট ফান্ড চালুর তিন বছর পর এইডস, ক্যান্সার, পোলিও, আর্থ্রারাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাঁপানি, ডায়াবেটিস বা ইবোলার মতো দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে। এ তহবিলের নারী সদস্য গর্ভবতী হলে পাবেন ২৫ হাজার টাকা। তবে একজন নারী সদস্য দুইবারের বেশি এ সুবিধা পাবেন না।

এই সুবিধা নিতে কর্মজীবী শ্রমিককে তার পেশা প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সনদপত্র নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে এই তহবিলের যাবতীয় কর্মপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে যে এলাকায় পোস্ট অফিস নেই সেখানে কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, সঞ্চয়ী ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয়ী ব্যাংকে এই প্রভিডেন্ট ফান্ডের অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। অ্যাকাউন্ট খোলার পর শ্রমিককে একটি ক্যাশকার্ড দেওয়া হবে। প্রতি বছর প্রাপ্য মুনাফাসহ আসল এই ক্যাশ কার্ডে জমা থাকবে।

শ্রমজীবীদের জন্য এ উদ্যোগ নি:সন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সরকারের এমন একটি মহতী উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবীদের মতো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরাও প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা পেলে তাদের বার্ধক্যে অনিশ্চয়তাপূর্ণ জীবনের যেমন অবসান ঘটবে তেমনি সমাজের বৈষম্যও দূর হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মে ২০১৭/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়