ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ত্রাণের পাশাপাশি প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৫ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ত্রাণের পাশাপাশি প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা

বর্ষার শুরু থেকেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে এবং ক্রমে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। প্লাবিত হয়েছে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চল। হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রাম। এসব এলাকায় লাখ লাখ লোক এখন পানি বন্দি। বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকশ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। বাড়ছে পানিবাহিত রোগ।

রংপুর অঞ্চলে তিস্তার পানিও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। সিরাজগঞ্জের চৌহারিতে উপজেলা বাঁধ বিভিন্ন স্থানে ধসে গেছে। টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। পার্বত্য অঞ্চলে ফের পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রবল বর্ষণের কারণে গত ১২ জুন রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামসহ ছয় জেলায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২০ জন মারা গেছে রাঙামাটিতে। যে কারণে পার্বত্য এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

দেখা গেছে প্রতিবছর এই বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধস, বন্যা, ফসলহানি, নদীভাঙনের ঘটনা ঘটছে। উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে প্রতিদিনই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় লাখ লাখ মানুষকে। পানিবন্দি মানুষ দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে। এসবের কি কোনো প্রতিকার নেই?

বিশেষজ্ঞদের মতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়েছে দেশের অধিকাংশ নদ-নদী। ফলে ভারি বর্ষণ কিংবা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেয়। প্লাবিত হয় দেশের নিম্নাঞ্চল। এটি টিকে যে আষাঢ়ে মৌসুমি বন্যা অস্বাভাবিক নয়। বিশেষত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্যাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যার খবর মিলছে সংবাদমাধ্যমে। ভারতের মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলে রাজপথ যেন পরিণত হয়েছে নদীতে। উজানে ভারতীয় অংশে ও বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

তাই এখন থেকেই বন্যাকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে খাবার ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। এ সময় ফসলহানির পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।  অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

এ অবস্থায় উপদ্রুত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। পর্যাপ্ত ত্রাণের পাশাপাশি বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করতে হবে এখন থেকেই। সময় থাকতেই ত্রাণ ও পুনর্বাসনের প্রস্তুতি নেওয়ার বিকল্প নেই। আমাদের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। বন্যা ও নদীভাঙন-পীড়িতদের মধ্যে তাৎক্ষণিক ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি ও পরিকল্পনাও গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বস্তুত এ দেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে বন্যার সঙ্গে বসবাস করে আসছে। বন্যা জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। কিন্তু অপরিকল্পিত সড়ক ও স্থাপনার কারণে বন্যা এখন জলাবদ্ধতা তৈরি করে। ভাঙন বেড়েছে নদী ভরাট হওয়ার কারণে। এক্ষেত্রে নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষা করে একদিকে যেমন বন্যার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তেমনি সম্ভব ভাঙন ঠেকানো।

আর বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি দিতে হবে। সাধারণতঃ বন্যার পানি সরে যাওয়ার পরপরই নানা রোগব্যাধি বেশি করে দেখা দেয়। এসব রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। বন্যাদুর্গত দরিদ্র মানুষের জীবিকার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে । সাধারণত বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী। সহায়-সম্বল হারানোর পাশাপাশি তাদের জীবিকার পথও বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। আমদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।  

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুলাই ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়