ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আদুরীর মামলার রায়

সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৯, ২৪ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে

যে বয়সে বই-খাতা হাতে স্কুলে যাওয়া, হেসে-খেলে সময় কাটানোর কথা তার , সেই বয়সে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে এসেছিল আদুরী। দরিদ্র পরিবার। নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন অবস্থা তাদের। তাই তিনবেলা পেটভরে খেতে এবং একটু ভাল থাকতে পারবে, এই প্রত্যাশায় ১১ বছরের আদুরীকে তার মা ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে।

কিন্তু ভাল থাকা কিংবা তিন বেলা খাবার দূরে থাক,  ঠিকমতো এক বেলা খাবারও জোটেনি তার। পরিবর্তে প্রায় এক বছর ধরে নিয়মিত অকথ্য নির্যাতন জুটেছে তার কপালে। বিগত ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর মিরপুর এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে যখন আদুরীকে উদ্ধার করা হয় তখন সে মৃতপ্রায়।

তার ওপর গৃহকর্ত্রী নওরীনের নির্যাতনের যে বর্ণনা সংবাদমাধ্যমগুলোতে এসেছে তা অকল্পনীয়। অবশেষে আদুরীকে নির্যাতনের মামলায় আসামি গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। জরিমানার অর্থ আদায়ের পর তা আদুরীকে দিতে হবে। জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আরো এক বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে নওরীনকে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, এ ধরনের নির্যাতন সমাজের সবাইকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা এ রায়কে যুগান্তকারী হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

মিরপুরে ডিওএইচএসের একটি ডাস্টবিন থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার হওয়া গৃহকর্মী আদুরীর ওপর নওরীন যে নির্যাতন চালানোর যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা শিউরে ওঠার মতো। আদুরীকে সারা দিনে এক বেলা খেতে দেওয়া হতো। হয় মুড়ি বা শুধু লবণ দিয়ে ভাত দিতেন নওরীন। আর কারণে-অকারণে হাতের কাছে যা থাকত, তাই দিয়ে মারতেন। কখনো গরম ইস্তিরি দিয়ে শরীরে ছ্যাঁকা, কখনো ব্লেড দিয়ে আঘাত করেছেন গৃহকর্ত্রী। তাকে এমন নির্যাতন করেছেন যে, একদিন মারা গেছে ভেবে আদুরীকে ডাস্টবিনে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন।

অকথ্য সেই সব নির্যাতনের চিহ্ন ও যন্ত্রণা আজও বয়ে বেড়াচ্ছে সে। আদুরীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির এক দিন পর জ্ঞান ফেরে তার। তখন সে পুলিশকে তার পরিচয় এবং যারা তাকে নির্যাতন করে ফেলে রেখে যায়, তাদের নামও জানায়। এরপর থানায় মামলা হয়। পুলিশের তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলার পর গৃহকর্ত্রী নওরীনকে ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১ অক্টোবর চার্জশিট দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় হয়।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের সমাজে এমন অনেকেই আছেন যারা গৃহকর্মীদের ব্যাপক নির্যাতন করেন। কারণে-অকারণে অমানুষিক নির্যাতন চলে তাদের ওপর।। কয়েক দিন আগে রাজধানীর পল্লবীতে ঠিকভাবে ডিমের অমলেট করতে না পারায় সাবিনা নামের এক গৃহকর্মীর শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা এবং রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে পিটিয়েছেন এক গৃহকর্ত্রী।

আমাদের দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে। নির্যাতন যেন তাদের নিয়তি। সামান্য ত্রুটি হলেই সইতে হয় নির্যাতন যা অবর্ণনীয়। যেসব কাজ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, এমন ভারী কাজও করানো হয় তাদেরকে দিয়ে। ফলে তার স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হয়।  তাদের মধ্যে অনেকে পুষ্টিহীনতায় ভোগে যার বড় প্রমাণ আদুরী।

আদালত গৃহকর্মীকে নির্যাতনের জন্য নওরীনকে যে শাস্তি দিয়েছেন, তা একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে আমরা মনে করি। আদুরীকে নির্যাতনের মামলার রায় দেশের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। আর এই মামলার রায় থেকে নওরীনের মতো সমাজের অবস্থাসম্পন্ন মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করবে এমনটিই প্রত্যাশা আমাদের। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়