ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের কষ্ট-দুর্ভোগ লাঘব করুন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩২, ৩০ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিক্ষার্থীদের কষ্ট-দুর্ভোগ লাঘব করুন

কয়েকদিন আগে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এখন উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রধান চিন্তা ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষালাভে ভর্তি হওয়া। অভিভাবকদেরও প্রত্যাশা সন্তানকে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাবেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা সীমিত। তাই উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে যেতে হবে।

ভর্তি পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, পরীক্ষার জন্য নির্ঘুম রাতে বাস-ট্রেন-লঞ্চে এক জেলা থেকে অন্য কোনো জেলায়, অজানা-অচেনা শহরে যাওয়া কিংবা রাত্রিযাপন। এতে যে কত কষ্ট এবং বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপন্ন বা অসহায় বোধ করেন নারী শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু পরীক্ষার জন্য এভাবে ছোটাছুটি যাতে না করতে হয় সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হলেও বাস্তবে কিছু হচ্ছে না। কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে আলোচনাও হয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও এ ব্যাপারে আগ্রহ এবং সুপারিশ করেছিল। কিন্তু জানান যায়, পরবর্তীতে সে উদ্যোগে ভাটা পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনীহায়!  

সাধারণতঃ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ লাভে একেকজন শিক্ষার্থী সাত-আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। কেননা অনেকেরই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সামর্থ্য নেই। ফলে দেখা যায় কোনো শিক্ষার্থী একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিল। এর এক দুদিন পর হয়তো তাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম কিংবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবার তার পরের দিন হয়তো যেতে হবে সিলেট বা কুমিল্লা কিংবা জাহাঙ্গীরনগরে।

অর্থাৎ একের পর এক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যেতে হেবে তাকে। তখন বৃষ্টিতে ভিজতে হবে কিংবা রোদে শুকাতে হবে। পথে-ঘাটে নানা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রাত হয়ে গেলে বিড়ম্বনা আরো বাড়ে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের বেশি সমস্যার মুখে পড়তে হয়।  দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাতায়াতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানও অনেকের জন্য বেশ কষ্টকর।

কয়েক বছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে কথা হচ্ছে । শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে অনেক শিক্ষাবিদ দিনের পর দিন লেখালেখি করেছেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নিজেও আগ্রহ দেখিয়েছিলেন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো। এক্ষেত্রে যেটি জানা যায় তা হলো, বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ব্যাপারে আগ্রহী নয়। এতে তাদের আয় কমে যাবে! তাই প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।

সমন্বিত পদ্ধতিতে যে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায় তার প্রমাণ বিগত কয়েক বছর ধরেই মেডিক্যাল কলেজগুলোতে এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। এর ফলে সেখানে শিক্ষার্থীদের এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় না। তাহলে একই পদ্ধতিতে কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না? সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী নিজ জেলায় বসেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের দুর্ভোগও লাঘব হবে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সঠিক ও দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন। সরকার তরফে জোরালো উদ্যোগ নিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দেবে বলে আমরা মনে করি। আমাদের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কষ্ট ও দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসবেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৭/আলী নওশের 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়