ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৬, ১৮ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

দেশে বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ২৬ জেলার ১৩১ উপজেলায় বন্যার পানি ঢুকেছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজারেরও বেশি পরিবার। অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রেল লাইন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও কুড়িগ্রামের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বগুড়ায় যমুনার তীরসংলগ্ন ও চরাঞ্চলের  দুই শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ফাটল দেখা দেওয়ায় যেকোনো সময় বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর থেকে জানা যায়, পাহাড়ি ঢলে মাত্র সাতদিনের মধ্যে যমুনার পানি ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার রেকর্ড ভেঙে বিপৎসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও  ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

পদ্মা নদীর পানি বাড়তে থাকায় রাজধানী ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট। দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি আরও ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ভাগ্যকূল পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

বন্যাকবলিত এলাকার কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। তিন হাজারেরও বেশি স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অধিকাংশ বন্যা দুর্গত এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। পানিবন্দি অনেক মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে শেষ সম্বল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে রেলের জায়গা, বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর অবশ্য পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারীতে পানি নামতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। সেরকম হলে তা হবে বড় স্বস্তির। বন্যা দুর্গতদের সাহায্যার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাব রয়েছে। বন্যার্ত মানুষের সবচেয়ে বড় চাহিদা হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য ও বিশুদ্ধ পানি। শুধু আশ্রয়কেন্দ্র নয়, পানিবন্দী হয়ে নিজেদের বাসা-বাড়িতে যারা আটকা পড়েছেন তাদেরও জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। অনেক স্থানে স্যানিটেশন বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এখন প্রয়োজনীয় ত্রাণ নিয়ে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো সবচেয়ে জরুরি। এই সময়ে শুকনো খাবার, স্যালাইন, বিশুদ্ধ খাবার পানি, হাত ধোয়ার সাবানসহ জীবনরক্ষাকারী ওষুধপত্রের প্রয়োজন হয়। বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ লাঘবে তাদের কাছে জরুরি ঔষধ ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী দ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যার্ত মানুষের সাহায্যার্থে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

এদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা দেবে অন্যরকম সমস্যা। তখন ডায়রিয়া এবং পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে। সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন কর্মসূচির পরিকল্পনাও এখন থেকেই নেওয়া প্রয়োজন। যাতে পানি নামতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করা যায়। আবার পানি সরে যাওয়ার পর দ্রুত অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। বন্যায় ঘরবাড়ি ও ফসল হারানো জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কিভাবে করা যায়, আগেভাগেই তার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ আগস্ট ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়