ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে অভিযুক্তদের

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে অভিযুক্তদের

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে চুরির অভিযোগ এনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে সাগর নামের এক কিশোর। তাকে নির্যাতনের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। খুঁটিতে বাঁধা সাগরের দেহ পিটুনিতে নেতিয়ে পড়ার যে চিত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা খুবই হৃদয়বিদারক। অবাক করা বিষয় হলো, এক ব্যবসায়ী ও তার ছেলে যখন  সাগরকে পেটাচ্ছে সে সময় চারপাশে উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে থেকে মজা দেখেছে। তার অনেক কাকুতি-মিনতি সত্ত্বেও বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ।

ঈশ্বরগঞ্জের চরশিরামপুর গ্রামের গাউছিয়া নামের এক মত্স্য হ্যাচারিতে কাজ করতো সাগর। সোমবার সকালে ওই কিশোরকে হ্যাচারির পানির মোটর চুরির অভিযোগে আটক করা হয়। পরে হ্যাচারি মালিকের নির্দেশে তার কর্মচারীরা সাগরকে আটকের পর বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেদম মারধর করে। এক পর্যায়ে কিশোরটি নেতিয়ে পড়লে হ্যাচারির পাশের একটি খেতে ফেলে দিয়ে লাশ গুম করার চেষ্টা চালানো হয়। আমাদের মনমানসিকতা কোন্ পর্যায়ে গেছে তা এঘটনা থেকে সুস্পষ্ট। আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা কিছুতেই দূর হচ্ছে না সমাজ থেকে।

এর আগে সিলেটের কুমারগাঁওয়ে ১৩ বছরের শিশু রাজনকে চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর রাজন হত্যাকাণ্ডের মাস তিনেকের মাথায় খুলনায় হত্যা করা হয় শিশু রাকিব হাওলাদারকে।  রাজন বা রাকিব হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশেই সচেতন মানুষ প্রতিবাদ করেছে। আটক করা হয়েছে অভিযুক্তদের। তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না।

রাজধানীর খিলক্ষেতে কবুতর চুরির অপবাদ দিয়ে কিশোর নাজিম উদ্দিনকে পিটিয়ে আধমরা করে গলায় রশি বেঁধে বালু নদীতে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। আর গত বছর এপ্রিলে বরিশালের বানারীপাড়ায় সদ্য ঘুমভাঙা শিশুর কান্নায় বাড়ির মালিকের দিবানিদ্রায় 'বিঘ্ন' ঘটানোয় ভাড়াটিয়ার অবুঝ সন্তানকে আছড়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। এবার চোর সন্দেহে গ্রামবাসীর সামনে সাগরকে খুঁটিতে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। প্রশ্ন হলো কেন এ নৃশংসতা, আইন হাতে তুলে নেওয়া?

গৌরীপুরের হ্যাচারি মালিকের অভিযোগ, সাগর তাদের হ্যাচারির পানির মোটর চুরি করেছে। তাকে হাতেনাতে ধরা হয়। কিন্তু দেশে প্রচলিত আইন আছে। তাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া যেত। তার পরিবর্তে কেন বেধড়ক পেটানো হলো? একজন হ্যাচারি মালিক আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বিচার করার ক্ষমতা কোথায় পেলেন? আর তিনি কী এতই ক্ষমতাধর যে কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পায় না?

সাগর হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একজন ব্যবসায়ীর যত প্রভাবই থাক না কেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার তাকে কেউ দেয়নি। দেশে প্রচলিত আইন আছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে। কিশোরটি কোনো অপরাধ করলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া যেত, তার বদলে যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে ও নির্মম একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমরা এজাতীয় সব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সমাজে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্যও ব্যবস্থা নিতে হবে। 

আমরা আশা করব, হ্যাচারিতে চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ভবিষ্যতে যেন কেউএ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায় তা নিশ্চিত করতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া হবে বিচারের মাধ্যমে।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়