ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পরিবেশ সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ প্রয়োজন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরিবেশ সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ প্রয়োজন

বিশ্বব্যাপী দূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা। নানারকম দূষণে বিপর্যস্ত হচ্ছে দেশগুলো। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বায়ুদূষণ। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে গত শুক্রবার দুষণ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে যে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশেই দূষণের মাত্রা তুলনামূলক বেশি। আর দূষণের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।

ল্যানসেটের গবেষণা তথ্য অনুসারে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী দূষণের কারণে সৃষ্ট রোগে প্রাণ হারিয়েছে ৯০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে বেশিরভাগ মৃত্যু ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। পরিবেশ দূষণের ফলে জনসংখ্যা অনুপাতে মৃত্যুর হারে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। ল্যানসেটের তথ্য অনুযায়ী নিম্ন বা মধ্যম-আয়ের দেশের বাসিন্দাদের প্রতি চারজনে একজন পরিবেশ দূষণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর দূষণজনিত মৃত্যুতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বায়ু দূষণের।

বাস্তবিকই আমরা দেখছি আমাদের দেশে রাজধানী ঢাকাসহ সর্বত্র বায়ুদূষণ বাড়ছে ব্যাপকহারে। দেশে শুধু বায়ুদূষণেই প্রতিবছর মারা যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ। বায়ুদূষণের কারণে দেশে অতিরিক্ত হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যুহারও বেড়েছে। বাংলাদেশে শিল্প বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, প্রাণিজ এবং অন্যান্য বর্জ্যসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ক্রমাগত শব্দ দূষণের ফলে মানুষ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিক এমনকি লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হন- এ কথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বহুবার জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ু, পানি ও শব্দ দূষণ যেন বর্তমানে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাবও পড়ছে পরিবেশের ওপর। গত এক যুগে দূষণ ও পরিবেশের বিচারে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়েছে বলে ল্যানসেট গবেষকদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক হল, দূষণ ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও তা রোধে সংশ্লিষ্টদের তরফে বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ঢাকা নগরীতে যেভাবে শব্দ দূষণ ও বায়ু দূষণ বেড়ে চলেছে তাতে এ নগরীর অর্ধেক মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে ৩০ ডেসিবেল পর্যন্ত কমে যাবে। শব্দ দূষণ চোখ ও মাথার বিভিন্ন সমস্যার জন্যও দায়ী। সম্প্রতি আদালত হাইড্রোলিক হর্নের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এরপরও হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে মনে হচ্ছে না। এজন্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

রাজাধানীতে যেভাবে  যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয় তা দেখে মনে হয় এ নগরী একটি ময়লার ভাগাড়। ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ময়লা ফেলার জন্য বেশকিছু স্থায়ী শেড নির্মাণ করা হয়েছে। আবার সড়কের পাশে ময়লা রাখার জন্য বিন (মিনি বক্স) বসানো হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। অনেক স্থানে চোরেরা সেসব খুলে নিয়ে গেছে। আবার যেসব স্থানে ময়লা রাখার শেড নির্মিত হয়েছে, সেখান থেকে নিয়মিত ময়লা সরিয়ে না নেওয়ার কারণে দুর্গন্ধে সেসব স্থানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া কষ্টসাধ্য।

বস্তুত দূষণ রোধ এবং দেশের পরিবেশ সুরক্ষার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। সারা দেশে বায়ুদূষণের উৎস বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরিভিত্তিতে।  পাশাপাশি অন্যান্য দূষণ রোধে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তার সফল বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে পানি দূষণের কারণেও প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রাণ হারায়। সারা দেশে বিশুদ্ধ পানির সংকট বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। তাই পানি দূষণ রোধেও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সব নদীকে দূষণমুক্ত করতে হবে। তা না হলে জনস্বাস্থ্য বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ অক্টোবর ২০১৭/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়