ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সভ্য সমাজে এ নিষ্ঠুরতা মেনে নেওয়া যায় না

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ৩১ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সভ্য সমাজে এ নিষ্ঠুরতা মেনে নেওয়া যায় না

হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীতে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া একটি মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে আপনজনেরাই! শরীরে কেরোসিন ঢেলে নৃশংস কায়দায় তাকে হত্যা করল আপন চাচি ও অন্যান্য স্বজন। মানুষ এরকম বর্বর ও নিষ্ঠুর হতে পারে তা ভাবাই যায় না। মোবাইল ফোন চুরি করার অপবাদ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় তার জীবন কেড়ে নিল মানুষ নামের পাষণ্ডরা। হত্যার অভিযোগ উঠেছে নিহত শিশুটির আপন চাচি, মেয়েটির বাবার ফুফু এবং চাচির ভাইদের বিরুদ্ধে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার খৈনকুট গ্রামে গত ২৭ অক্টোবর এ নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটেছে। মোবাইল চুরির মিথ্যে অপবাদ দিয়ে নির্যাতনের পর কেরোসিন ঢেলে  আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ১৩ বছরের আজিজা বেগমের শরীরে। আজিজার চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। সেখানেই শনিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

খৈনকুট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল আজিজা। মৃত্যুর আগে সে তার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের নামও বলে গেছে। আজিজার বাবা পোল্ট্রি খামারের শ্রমিক আব্দুস সাত্তার সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আজিজা বলেছে- ‘বাবা, আমি তো মরে যাব। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি মোবাইল চুরি করিনি। ওরা আমার হাতমুখ বেঁধে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’ ঘটনার পর থেকে চাচি বিউটি বেগম ও তার স্বজনরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজিজার ফুফু তমুজা বেগম এবং কেরোসিন বিক্রেতা আবদুর রশিদকে আটক করে পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তমুজা  জানিয়েছে, মোবাইল চুরি নয়, বিউটি বেগমের পরকীয়ার কিছু দৃশ্য দেখে ফেলেছিল আজিজা। আর সে কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তমুজাই শুক্রবার বিকেলে কৌশলে আজিজাকে একটি সিএনজিতে তুলে যোশর ইউনিয়নের উত্তর কামালপুর গ্রামে চাচি বিউটি বেগমের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে হাত-পা ও মুখ বেঁধে আজিজাকে নির্যাতন করা হয়। পরে রাতে বাড়ির কাছে একটি টিলায় নিয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা হয়তো ভেবেছিল, ঘটনাস্থলে আজিজা মরে যাবে। ফলে তাদের ব্যাপারে কেউ কিছু জানতে পারবে না।

সমাজ থেকে সব নৈতিকতাবোধ যেন উধাও হয়ে গেছে। যারা এ কাজ করছে তাদের কী মানুষ বলা যায়? এরা পশুরও অধম। আর এধরনের অমানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যেভাবে আমাদের শিশুরা পারিবারিক, সামাজিক বিরোধের শিকারে পরিণত হচ্ছে তা খুবই উদ্বেগের। কিন্তু সভ্য সমাজে এসব মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই না আজিজার মতো আর কেউ এরকম নৃশংস হত্যার শিকার হোক। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। এসব নরাধমকে আইনের আওতায় আনতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। ঘাতকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ অক্টোবর ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়