ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

জোরদার করবে মৈত্রীবন্ধন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১১ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জোরদার করবে মৈত্রীবন্ধন

অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পর আবারও চালু হয়েছে খুলনা-কলকাতা ট্রেন চলাচল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৯ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যাত্রীবাহী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস-২ (বন্ধন এক্সপ্রেস) এর ননস্টপ সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। একই অনুষ্ঠানে ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের সংযোগকারী দুটি রেলসেতু এবং ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের উভয় প্রান্তের বহিরাগমন ও কাস্টমস কার্যক্রমের উদ্বোধনও করা হয়। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে এই রুটে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী এ ট্রেন চলাচল করবে।

এর আগে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পরও খুলনা ও কলকাতার মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতো। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই রেল যোগাযোগ। এরপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে আবার রেল যোগাযোগের বিষয়ে কথা হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে রেলপথের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং অন্যান্য কারণে তা চালু করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় গতি আনতে সরাসরি বাস চলাচল এবং আগে যেসব রুটে ট্রেন চলাচল ছিল তা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর মাধ্যমে রেল যোগাযোগের শুভ সূচনা হয় কয়েক বছর আগে। আর গত ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় এ ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। আমরা মনে করি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সামগ্রিক উন্নয়ন প্রশ্নে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

বন্ধন এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করে প্রতিবেশী দেশগুলোর বন্ধন আরও জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদেশের মধ্যে ১৯৬৫ সালের আগে চালু থাকা রেল রুটগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এসময় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধন শুধু রেলের বন্ধন নয়, এই বন্ধন যাতে দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেটিই আমাদের কাম্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী দুই প্রতিবেশী দেশের নেতাদের বন্ধুত্ব প্রটোকলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন।

আগে মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে বা আসার পথে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হতো। এখন ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়ার আগেই বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবে। আর গন্তব্য শেষে কলকাতায় হবে ভারতীয় অংশের ইমিগ্রেশন। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে যেমন প্রভাব ফেলবে তেমনি নিরসন হবে যাত্রাপথের ভোগান্তির।

খুলনা-কলকাতা সরাসরি রেল যোগাযোগ দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে হাজার হাজার মানুষের যোগাযোগকে নিরাপদ ও সহজতর করবে। মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় খুলনা থেকে কলকাতায় যাওয়া-আসা করা যাবে। দুই দেশের বন্ধুত্বকে জনগণের বন্ধুত্বে পরিণত করার ক্ষেত্রে তা অবদান রাখবে। নতুন ও বিরতিহীন বন্ধন এক্সপ্রেসের উদ্বোধন এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে।  আমরা মনে করি,  এর ফলে দুদেশের অর্থনীতির ভিত্তিই শুধু মজবুত হবে না, একইসঙ্গে দুদেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কেরও বিকাশ ঘটাবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ নভেম্বর ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়