ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অমর একুশে

সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার চাই

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার চাই

আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার আদায়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে রক্ত দিয়েছেন সালাম, জব্বার, বরকত, রফিক, শফিক ও নাম না জানা অনেকে। ভাষাশহীদদের রক্ত বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানে পাকিস্তানি শাসকদের বাধ্য করেছিল। আর ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই এসেছে আমাদের স্বাধীনতা। এ জন্য ভাষা আন্দোলনকে স্বাধীনতার সূতিকাগারও বলা হয়। একুশের শহীদদের প্রতি জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। শহীদ স্মৃতি অমর হোক।

প্রতিবছর ঘটা করে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করি। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, আমরা আজও বাংলা ভাষার সঠিক মর্যাদা দিতে পারিনি। দেশে সর্বস্তরে এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি বাংলা ভাষা। রাষ্ট্রীয় এবং দাপ্তরিক অনেক কাজ করা হচ্ছে ইংরেজিতে। অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম, সাইনবোর্ড লেখা হচ্ছে ইংরেজিতে। আবার বাংলায় লেখা হলেও তা ভুল বানানে লেখা হচ্ছে।

বাংলা ব্যবহারে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখনো তা রয়ে গেছে কাগজে-কলমে। সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং আদালত ও মন্ত্রণালয়সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডই রয়েছে ইংরেজিতে। একুশে ফেব্রুয়ারি এলে আমরা ভাষা নিয়ে মাতামাতি শুরু করি। আবার পরদিন সব ভুলে যাই। এটা মাতৃভাষা নিয়ে আমাদের দৈন্যতার পরিচয়ই বহন করে।

এ কথা অনস্বীকার্য যে, সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন ব্যতীত একটি জাতির সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপান শিক্ষার সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন করে মাত্র দুই দশকের মধ্যে শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। জাপান এখন বিশ্বের সেরা পাঁচটি ধনী দেশের মধ্যে অন্যতম। মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করে একইভাবে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া আজ পৃথিবীতে মর্যাদাসম্পন্ন দেশ। তারা নিজ নিজ মাতৃভাষার শিক্ষা নিয়ে যদি বড়মাপের প্রকৌশলী, ডাক্তার বা ব্যবস্থাপক হতে পারে, তাহলে আমরা পারব না কেন?

বাংলা ভাষার আসন আজ বিশ্বের দরবারে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত।  একুশে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বাঙালি জাতির মাতৃভাষার সংগ্রামকে সম্মান জানিয়েছে। কিন্তু আমার নিজেরা সেই ভাষার যথাযথ সম্মান দিচ্ছি না। অনেক ক্ষেত্রেই ইংরেজির ব্যবহার বাংলা ভাষার মর্যাদা নষ্ট করে দিচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজন আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন।

আমাদের ভাষার প্রতি আরো যত্নশীল হতে হবে। ইউনেস্কোর পাশাপাশি বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বাংলা ভাষার উৎকর্ষ ও বিকাশে অব্যাহত উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। প্রশাসন, আদালত, শিক্ষা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার করতে হবে। আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি ব্যবহারিক জীবনেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়