ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

বাংলাদেশে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদন মতে, ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি। গত কয়েক বছরে ঢাকার বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর বাতাসে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম ২.৫ ও পিএম ১০-এর মাত্রা বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইডের উপস্থিতিও। মার্কিন গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের মতে, বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে পিএম ২.৫।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৫ দিনে ঢাকার বায়ুমান পরীক্ষায় দেখা গেছে বেশির ভাগ সময়ই ঢাকার বাতাস ছিল অতি অস্বাস্থ্যকর। কিছু কিছু সময় তা বিপজ্জনক মাত্রায়ও চলে গেছে।  ২০১৭ সালের শেষ দিকে বিশ্বজুড়ে  প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়,  বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি। পরিবেশবিদদের মতে, শিল্প-কলকারখানা ও পুরনো মোটরযান থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া এবং যত্রতত্র খোলা ডাস্টবিন বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমে বৃদ্ধি করছে। ঢাকায় মুক্তভাবে প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার উপায় নেই। চলাফেরার সময় অনেকেই এখন মাস্ক ব্যবহার করছেন। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে মানুষ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগ ও স্ট্রোক, ফুসফুসে ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রোগাক্রান্ত হয়ে অকালমৃত্যুও ঘটছে।

রাজধানীর বায়ুদূষণের একটি প্রধান কারণ আশপাশে থাকা অজস্র ইটভাটা। আইনানুযায়ী জনবসতির কাছাকাছি ইটভাটা থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু সেই আইন মানছেন না অনেকেই। ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলে। সরকারি কিংবা বেসরকারি বিভিন্ন কাজে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বা নির্মাণকাজের কারণে ঢাকার বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ বাড়ছে। এছাড়া ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, লালবাগ ও হাজারীবাগে শিল্প-কারখানা অবস্থানের কারণে আশঙ্কাজনক হারে বায়ুদূষণ হচ্ছে।

দূষণ শুধু ঢাকার বাতাসেই নয়, মহানগরীর চারপাশের নদী-নালা, খালের পানিও মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, শিল্প-কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক দূষণ, বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে দূষণ ক্রমে বাড়ছে। সিসাযুক্ত পেট্রল আমদানি ও দুই স্ট্রোক ইঞ্জিনবিশিষ্ট বেবিট্যাক্সি চলাচল বন্ধ করার পরও বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। ফিটনেস ও কালো ধোঁয়ার সহনীয় মাত্রা পরীক্ষা ছাড়াই ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন ঢুকছে বহু ট্রাক। ত্রুটিপূর্ণ বাস, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি, বেবিট্যাক্সি এবং বিভিন্ন কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত রাসায়নিক বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে।

আমরা একটু সতর্ক হলেই এই দূষণ রোধ করা সম্ভব কিংবা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। পরিবেশ আইন ও বিধান ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নগরের আশপাশে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ইটভাটা নির্মাণে জোর দিতে হবে। নির্মাণকাজে যাতে ধুলা কম হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিয়ম মেনে কাজ করা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে তদারকি করা প্রয়োজন। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।

সমস্যা সমাধানে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেসব কারণে বায়ুদূষণ ঘটছে তা রোধে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে শুধু সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, এ কাজে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে যুক্ত করে দেশের মানুষকে আরো সচেতন করে তুলতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জানুয়ারি ২০১৯/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়