ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪১, ৮ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা অত্যন্ত গর্হিত ও বেদনাদায়ক ঘটনা। আধুনিক সভ্য জগতে এমন বর্বর ঘটনা খুবই বিষ্ময়কর এবং একই সঙ্গে তা উদ্বেগের বিষয়। আরো বিষ্ময়কর ব্যাপার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় জড়িত। ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা হওয়ার পর তা তুলে নিতে অস্বীকার করায় তাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যেন আদিম বর্বর যুগে ফিরে এসেছে আবার!

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত শনিবার নিজের মাদরাসার কেন্দ্রে  আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে যান আলিমের ছাত্রী নুসরাত। ওই সময় তাকে ডেকে ছাদে নিয়ে যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী। বোরকা পড়া ও নেকাবে মুখ ঢাকা ওই শিক্ষার্থীরা নুসরাতকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। কিন্তু মামলা তুলে নিতে অস্বীকার করায় তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই আমাদের। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই একজন ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা নজিরবিহীন। আরো ভয়ংকর বিষয় হলো তারই সহপাঠীরা তাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি শ্লীলতাহানির চেষ্টাকারী অধ্যক্ষ ও তার সহকারীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

ফেনীর ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এর আগেও অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠেছিল। সে সব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে নুসরাতকে হয়তো এভাবে আগুনে পুড়তে হতো না। আগুন দেওয়ার ঘটনার পর ইতিমধ্যে ওই মাদরাসায় পাঠদান স্থগিত এবং মাদরাসার অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দগ্ধ ছাত্রীর গায়ে আগুন দেওয়ার জন্য দায়ীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়ে শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি ও নানা ধরনের নিপীড়নের শিকার হওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রায়ই এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়। আবার অনেক ঘটনাই প্রকাশ পায় না এবং অপরাধীদের শাস্তি হয় না। হয়রানি ও লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগিরা চুপ থাকে বা মামলা করে না। এ সুযোগে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে যায়। ফেনীর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করায় তাকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার পর। এ ক্ষেত্রে ওই ছাত্রী প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। হুমকি সত্ত্বেও সে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এখানে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, শ্নীলতাহানির মামলা দায়েরের পর থেকে একটি মহল ওই ছাত্রীর পরিবারকে নানা হুমকি দিয়ে আসছিল। আবার একটি মহল অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে মাদরাসায় মানববন্ধনও করেছে। এ ক্ষেত্রে হুমকিদাতা ও অভিযুক্ত অধ্যক্ষের পক্ষ নেওয়াদের আইনের আওতায় আনলে প্রকৃত অপরাধীদের আটক করা সহজ হবে বলে আমরা মনে করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর কেউ যেন নুসরাতের মতো ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয় সে জন্য প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নুসরাতকে নৃশংসভাবে হত্যা চেষ্টার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। অপরাধীরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন আইনের হাত থেকে তারা যেন কিছুতেই রেহাই না পায়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ এপ্রিল ২০১৯/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়