ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন হোক

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৪, ১৮ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন হোক

সুপ্রিম কোর্ট সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে নির্যাতিত নারী ও শিশুর জবানবন্দি নারী হাকিম (ম্যাজিস্ট্রেট) দিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার ইতিমধ্যে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ - এ বর্ণিত অপরাধ সংঘটনে ওয়াকিবহাল ব্যক্তির জবানবন্দি ওই আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়। অপরাধের তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে লিপিবদ্ধকৃত জবানবন্দি গুরুত্ব বহন করে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, বর্তমানে বেশকিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ‘স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস’ জানতে পেরেছে। একজন পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নারী বা শিশু ভিকটিম ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দিতে সংকোচ বোধ করেন। ফলে নির্যাতনের শিকার শিশু বা নারী ঘটনার প্রকৃত বিবরণ দিতে অনেক সময় ইতস্তত বোধ করেন। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভিকটিম নারী বা শিশুদের জবানবন্দি একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে লিপিবদ্ধ করা আবশ্যক। এ অবস্থায় সংঘটিত অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুর জবানবন্দি নেওয়ার দায়িত্ব নারী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অর্পণের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট জেলা বা মহানগরীতে নারী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকলে অন্য কোনো যোগ্য ম্যাজিস্ট্রেটকে এ দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এ নির্দেশনা অনুসরণের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা বা অসুবিধা দেখা দিলে তা সুপ্রিমকোর্টের নজরে আনতেও অনুরোধ করা হয়েছে সার্কুলারে। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি নারী নির্যাতনের ঘটনা এবং ফেনীর কলেজছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ ওঠার মধ্যে এমন নির্দেশনা এলো।

বস্তুতঃ নারী নির্যাতন বিশেষত যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তা এবং পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে নিজেদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ করতে গিয়ে নারী ও শিশুরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। বিশেষ করে পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে তারা যে অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হন সেটি আরো সুস্পষ্ট হয়েছে নুসরাতের জবানবন্দি নেওয়ার সময় ফেনীর ওসির অসদাচরণ এবং তার ভিডিও প্রকাশের ঘটনা থেকে।

নির্যাতিত নারী ও শিশুদের জবানবন্দি গ্রহণে নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়ার যে নির্দেশনা দেশের সর্বোচ্চ আদালত দিয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। এই সিদ্ধান্ত খুবই সুচিন্তিত ও সময়োপযোগী। দেশে একের পর এক ধর্ষণ, নির্যাতনসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। যেসব নৃশংস ঘটনা ঘটছে তা যেন আদিম বর্বরতাকেও হার মানায়। এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে না পারলে জনজীবনের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হবে। ভিক্টিম নারী বা শিশু যেন প্রকৃত ঘটনার প্রকৃত বিবরণ স্বাভাবিকভাবে দিতে পারে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুবিচারের স্বার্থেই তা জরুরি।

আমরা মনে করি, নারী  ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্যাতিতার জবানবন্দি দেয়ার সুযোগের পাশাপাশি অন্য যে বিষয়গুলো আছে, তাও বিবেবচনায় আনতে হবে। নারী-শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনের যে মহামারি চলছে, তার পেছনে অন্যতম কারণ হলো অপরাধ করেও আইনে ফাঁক গলে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঠিক বিচার না হওয়া এবং সামাজিক হয়রানি বা লোকলজ্জার ভয়ও বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের প্রত্যাশা, বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নিদের্শনার যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ এপ্রিল ২০১৯/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়