ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শিশু মৃত্যুকে ‘বালা’ ভেবেছিল ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০১, ১৭ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশু মৃত্যুকে ‘বালা’ ভেবেছিল ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ত্রিপুরা পাড়ায় শিশু মৃত্যুতে ওখানকার বাসিন্দারা প্রথমে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ এবং পরে ‘বালা’ মনে করেছিল। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য তারা মশাল জ্বালিয়ে প্রার্থনাও করেছিল। প্রার্থনার পরদিন কেউ মারা না যাওয়ায়, প্রার্থনা কাজে লেগেছে বলে মনে করেছিল তারা। কিন্তু একদিন পর আবার শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় মেনে নিতে পারেনি ত্রিপুরা পাড়ার কয়েক তরুণ। এমনটাই উঠে আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে।

সোমবার মহাখালী আইইডিসিআর মিলনায়তনে ত্রিপুরা পাড়ায় অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণ-ক্লিনিক্যাল ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা এবং রোগতাত্ত্বিক সমীক্ষার পর্যবেক্ষণ জানাতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ত্রিপুরা পাড়ায় ৮ জুলাই অসুস্থতার কারণে একটি শিশু মৃত্যুবরণ করে। পরিবার এবং সম্প্রদায়ের লোকেরা এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করেছিল। পর দিন ৯ জুলাই আরো দুটি শিশু মারা যায়। মোট তিনটি শিশু মারা যাওয়ার পর তারা এটিকে ‘বালা’ মনে করে এবং এর থেকে পরিত্রাণের জন্য ওই রাতেই সবাই মিলে মশাল জ্বালিয়ে প্রার্থনা করে যাতে ‘বালা’ দূর হয়।

তিনি বলেন, মশাল জ্বালিয়ে প্রার্থনার পর দিন ১০ জুলাই কোনো শিশু মারা না যাওয়ায় তারা মনে করে প্রার্থনা কাজে লেগেছে। কিন্তু ১১ জুলাই একটি এবং ১২ জুলাই আরো চারটি শিশু মারা যায়। এ সময় আরো বেশ কয়েকজন অসুস্থ ছিল।



চট্টগাম জেলা ও সীতাকুণ্ড উপজেলার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, ত্রিপুরা পাড়ার পাহাড়ি টিলায় ৮৫ পরিবারের (লোকসংখ্যা ৩৮৮ জন) একটি ছোট উপজাতি সম্প্রদায় বাস করে। এর কিছু দূরে একটি ছোট বাঙালি বসতি আছে। কিন্তু ত্রিপুরা পাড়ার উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন অন্য সম্প্রদায়ের কারো সঙ্গে মেলামেশা করে না। এরা সম্প্রদায়ের নেতার পরামর্শ, উপদেশ এবং আদেশ-নিষেধ মেনে চলে। আধুনিক জীবনযাত্রা এবং সরকারি প্রশাসন ও সেবা ব্যবস্থা থেকেও সম্প্রদায়ের লোকজন দূরে থাকার চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, আধুনিক চিকিৎসা নেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্টত অনীহা সম্প্রদায়টির কয়েকজন তরুণ মেনে নিতে পারেনি। তারা পাশের বাঙালি সম্প্রদায়কে বিষয়টি অবহিত করে। সেই সূত্রেই সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতে পারেন। এরপরই তাদের চিকিৎসাসহ দ্রুত সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ১২ জুলাইয়ের পর সেখানকার আর কোনো মানুষ মারা যায়নি। মৃত ৯ শিশুর বয়স ৩ থেকে ১২ বছরের মধ্যে।

ঘটনা শোনার পর আইইডিসিআর’র টিম সেখানে গিয়ে ভর্তি রোগীদের রক্ত ও গলার নিঃসরণের নমুনা সংগ্রহ করে। ঢাকায় যথাক্রমে আইইডিসিআর ল্যাবরেটরি এবং জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পোলিও ও মিজলস ল্যাবরেটরিতে নমুনাসমূহ পরীক্ষা করা হয়।

অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, পরীক্ষা করে দেখা গেছে আক্রান্ত ও মৃত শিশুরা হাম রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল। তারা অপুষ্টিতে ভুগছিল এবং এর ফলে সংক্রমণ একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল। অপুষ্টির কারণে সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করেছিল। ত্রিপুরা পাড়ার কেউই হামের টিকা পায়নি।

ত্রিপুরা পাড়ায় বর্তমান ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে আবুল কালাম আজাদ জানান, চিকিৎসাধীন রোগীদের সুচিকিৎসা চলছে। এলাকার বাসিন্দা বীরেন্দ্র ত্রিপুরার বাড়িতে অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইপিএইচএন কর্তৃক ওই পল্লীতে পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একই সঙ্গে ওই এলাকায় রোগ-ব্যাধি ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত পর্যাবেক্ষণ চলবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরীনা ফ্লোরা, চট্টগ্রাম সিভি সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী প্রমুখ।

আরো পড়ুন





রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুলাই ২০১৭/সাওন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়