ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

খেজুরের মিষ্টি রসে বশ

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খেজুরের মিষ্টি রসে বশ

জুনাইদ আল হাবিব : উত্তর দিগন্ত ছুঁয়ে দক্ষিণ দিগন্তে ছুটে হিমেল বাতাস। বাতাসের প্রতিটি অণুতে পানির আধিক্য। ঠান্ডা, কুয়াশা, শৈত্যপ্রবাহ। অর্থাৎ শীতকাল। আর শীতকাল মানেই গাছিদের ব্যস্ত সময়। আকাশের দিকে উঁকি দেয়া খেঁজুর গাছের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া।

দুপুরের তেজদীপ্ত সূর্যরশ্মি যখন ক্লান্ত হয়ে তার ঘরে ফেরার পথে, ঠিক তখনি একদল মানুষ দা ধারালো করে খেজুর গাছে উঠেন। একদম গাছের মুকুলের কাছের একটি জায়গাকে মোলায়েম করে কাটেন। তারপর বাঁশের চুঙি দিয়ে হাঁড়িতে রস প্রবাহের সুন্দর ব্যবস্থা করেন। হাঁড়ির কানায় কানায় ভরে উঠে রসে আর রসে। খুব ভোরে গাছের মালিক ছুটে যান রস সংগ্রহে। রসের হাঁড়ি নিয়ে কেউ কেউ ছুটে যান বাড়ি বাড়ি। এ রস গ্রামের বহু বাড়িতেই ঘরোয়া পরিবেশে আগুনে গরম করা হয়। কেউ রস দিয়ে পিঠা বানান, কেউ পায়েস-সেমাই, কেউবা গুড় তৈরি করেন। তবে কাঁচা রস খাওয়ার স্বাদ নিতে রাতের আঁধারেও ছুটেন কেউ কেউ।

যেমনটি বলছিলেন একটি অনলাইন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সোলায়মান ডালিম হাজারী। তিনি বলেন, ‘খেজুর রসের কথা মনে পড়লে আমার ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে যায়। আমি ছোটবেলায় ব্যাপক দুষ্টু ছিলাম। রাতের বেলায় রসের হাঁড়ি চুরি করে খেতাম। হয়তো আগের মতো এ রস খাওয়া সম্ভব হয় না, তবে চেষ্টা করি শীত আসলেই খেজুর রসের ঘ্রাণ নিতে।’

বাংলাদেশ স্কাউটসের মিডিয়া টিমের সদস্য জয়নাল আবেদিন রবি রস খাওয়া নিয়ে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলছিলেন, ‘ছোটবেলায় মিশন ছিল একটাই, খেজুরের রস চাই। সরাসরি গাছ থেকে নামিয়ে রস খেয়েছি। আবার বাড়িতেও নিয়ে এসেছি। আহ! স্বাদ যেন এখনোও মুখে লেগে আছে। একবার রস খেতে গিয়ে পা ভেঙে ফেলি। তারপর দুই দিন হাসপাতাল ছিলাম।’



রস নিয়ে যত স্মৃতি, গল্প থাকুক না কেন, দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যাটা যে কমছে তা অস্বীকার করার নয়। খেজুরের রসকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিকভাবে তেমন কারখানা না গড়ে ওঠা, রসের সঠিক দাম না পাওয়া এবং গাছিদের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে এর খেজুরের রস বিলুপ্ত হতে চলেছে।

আগেকার দিনে গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটলে মেঠোপথের দু’ধারেই খেজুর গাছের দেখা মিলতো। সেজন্য স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে খেজুর গাছের প্রতীকও বরাদ্দ দেয়া হতো। কিন্তু কালের পরিবর্তনে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে নির্বাচনী প্রতীকে খেজুর গাছও এখন চোখে পড়ে না।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের খেজুর গাছের মালিক এবং গাছি মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আঁই (আমি) প্রত্যেক বছর সাতটা থেকে আটটা খেঁজুর গাছ চিলি। খেজুরের রসের ব্যাপক চাহিদা আছে। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত কেজি রস পাওয়া যায়। যা বিক্রি করে আমার সংসারও খুব ভালো চলে।’

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, ‘খেঁজুরের রস এখন কলস হিসেবে বিক্রি হয়। যেমন প্রতি কলস রসের মূল্য ৫০০ টাকা। প্রতি কলস রসের ওজন হবে চার থেকে পাঁচ কেজি।’



অনেকে মিলাদ-মাহফিলে তবারক হিসেবে সেমাই রান্না করতে খেজুরের রস কিনে নেন। তবে একটা সুন্দর বিষয় হচ্ছে, শীতে তৈরি হয় খেজুর রসের গুড়। আর তা থেকে মজার মজার পিঠা। এছাড়াও রসের গুড় দিয়ে মুড়ি মিশিয়ে খাওয়ার মজাটাই যেন অন্যরকম।

পড়ুন :
* রসের হাড়িতে পাখির ফাঁদ​




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়