ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঘরের মাঠে দুর্বার হয়ে উঠতে পারে ইংলিশ সিংহরা

সাইফ মুহাম্মাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০০, ১৬ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘরের মাঠে দুর্বার হয়ে উঠতে পারে ইংলিশ সিংহরা

সাইফ মুহাম্মাদ : ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে বিদায় নিচ্ছে একটা করে দিন, আর সমান্তরালে এগিয়ে আসছে আরো এক ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাহেন্দ্রক্ষণ। সময় যতো যাচ্ছে বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনার পারদ উঠছে ততোই উঁচুতে। এবারের বিশ্বকাপের দলসংখ্যা মাত্র ১০টি হলেও মাঠের উত্তেজনায় তা তেমন একটা প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা; কারণ প্রতিটি দল অন্তত নয়টি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। অর্থাৎ এবারের বিশ্বকাপ হয়ে উঠতে পারে সব দলের সমান সম্ভাবনার মঞ্চ। যে মঞ্চে এক-দুইবার পা ফসকে গেলেও ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ সব গল্প রচনা করতে পারে যে কোনো দল।

সব দলের সমান সম্ভাবনার যে যৌক্তিক বিশ্লেষণ, তা মেনে নিয়েও এ কথা বলা যায় যে, এবারের বিশ্বকাপে যে কোনো প্রতিপক্ষের সামনে মহাশক্তি নিয়ে হাজির হতে পারে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেতে মুখিয়ে আছে ইংলিশরা।

আইসিসির সর্বশেষ প্রকাশিত ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান এক নম্বরে। না, এটিই ইংল্যান্ডের মহাশক্তিধর হয়ে উঠার সম্ভাবনার একমাত্র কারণ নয়; বরং গত বিশ্বকাপের পর থেকে যে অবিশ্বাস্য প্রভাব তারা দেখিয়েছে, তাতে তাদেরকে ফেভারিট মনে না করাই হবে মস্ত বড় বোকামি।

গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত (১৪ মে) ইংল্যান্ড ওয়ানডে খেলেছে ৮৬টি। এর মধ্যে তারা জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ৫৫টি ম্যাচে। বাকি ম্যাচগুলোর মধ্যে একটি টাই হয়েছে এবং পাঁচটিতে কোনো ফল আসেনি।

গত বিশ্বকাপের পর থেকে আর কোনো দলের সাফল্যের হার এতো চমকপ্রদ নয়। ইংল্যান্ডকে এমন সাফল্যের পেছনে তাতিয়ে দিয়েছে সম্ভবত গত বিশ্বকাপের ব্যর্থতা। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ থেকে তারা ছিটকে পড়ে বাংলাদেশের কাছে হেরে। রুবেল হোসেনের অসাধারণ বোলিংয়ে সেই ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা ২৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি; গুটিয়ে গেছে ২৬০ রানে।
 


ওই হারের ধ্বংসস্তুপ থেকেই যেনো ফিনিক্স পাখির প্রাণ নিয়ে ইংলিশদের ওয়ানডে ক্রিকেটের পুনর্জন্ম ঘটেছে। না, কথাটা একদমই বাড়াবাড়ি কিছু নয়। গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩৫ বার ৩০০ বা এর চেয়ে বেশি রান করে ইংল্যান্ড তা প্রমাণ করেছে। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার ৩০০ বা এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডও ইংলিশদেরই।

রেকর্ডবুক বলছে, গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট সাতবার ৩০০ বা এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জিতেছে ইংল্যান্ড। অন্য কোনো দলের তিনবারের বেশি এই কীর্তি নেই। এই সময়ের মধ্যে দুইবার চারশর বেশি রান করার কীর্তিও আছে তাদের।

বিশ্বকাপের প্রথম পাঁচ আসরের প্রতিটিতেই সেমিফাইনাল খেলেছে ইংলিশরা। এর মধ্যে তিনবার শিরোপার চূড়ান্ত লড়াই- ফাইনালেও পড়েছে তাদের পদচিহ্ন। কিন্তু দুর্ভাগা ইংলিশরা একবারও ছুঁয়ে দেখতে পারেনি বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের শিরোপা। সেই দুঃসহ অতীত ভুলে, ইতিহাসের অচলায়তন ভেঙে এবার বেরিয়ে আসতে চান মরগ্যান ও তার সতীর্থরা।

তাদের এই চাওয়ার পক্ষে সবচেয়ে বড় শক্তি নিঃসন্দেহে তাদের ব্যাটসম্যানরা। পরিসংখ্যান বলছে, গত বিশ্বকাপের পর থেকে যে ১০ ব্যাটসম্যান ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন, তাদের মধ্যে তিনজনই ইংলিশ।

এদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান জো রুটের। গত বিশ্বকাপের পর খেলা ৭৬ ম্যাচে ৩৩৩৫ রান করেছেন তিনি। সঙ্গে ছিলো ১০টি সেঞ্চুরি এবং ২১টি হাফ সেঞ্চুরি। এই সময়ে তার চেয়ে বেশি রান এসেছে কেবল ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে। এ ছাড়া মরগ্যান ও জ্যাসন রয়ও আছেন এই তালিকায়। তাদের সংগ্রহ যথাক্রমে ২৯৪৬ ও ২৮৮৪ রান।
 


এই তিনজনই মূলত ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনের শিরদাঁড়া। তাদের ব্যাটে যতো বেশি রানের দেখা পাবে ইংলিশরা, ম্যাচ শেষের হাসি ততোই প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারে তাদের ঠোঁটে।

একই সময়ে বল হাতে যারা বিশ্ব শাসন করেছেন, তাদের মধ্যে এক নম্বরে আদিল রশিদ। ইংলিশ এই স্পিনার গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮১ ম্যাচ খেলে ১২৭টি উইকেট তুলে নিয়েছেন। সেরা দশে থাকা লিয়াম প্লাঙ্কেটও ছিলেন অসাধারণ। ৫৩ ম্যাচ তার শিকার মোট ৮৫ টি উইকেট।

এই পাঁচজন যদি ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়ের প্রধান ভরসা হন, তবে পার্শ্বচরিত্রে আছেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডাররা। ধারণা করা হয়, অলরাউন্ডারদের কাঁধে ভর করেই প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের অচেনা স্বাদ পেতে পারে ইংল্যান্ড। সেই অলরাউন্ডারদের তালিকায় আছেন বেন স্টোকস, মঈন আলি ও ক্রিস ওকসের মতো পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞ তারকারা।

এদের বাইরে জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, জো ডেনলি বা মার্ক উডরাও নিজেদের দিনে প্রতিপক্ষের জন্য মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হতে পারেন। সব মিলিয়ে বিশ্ব জয়ের সমস্ত রসদই আছে স্বাগতিকদের ভাণ্ডারে। এখন তাদের প্রার্থনা কেবল ২২ গজে নিজেদের উজাড় করে দেয়া। ইংলিশরা যদি সেই কাজটা ঠিকঠাক করতে পারে, তাহলে তাদের ঘরের মাঠে অন্য ক্রিকেট পরাশক্তিদের খুব বেশি বড় স্বপ্ন না দেখাই ভালো।

ইংল্যান্ডের শক্তির ভাণ্ডার আরো ভরপুর হয়ে উঠতে পারতো অ্যালেক্স থাকলে। কিন্তু বিধ্বংসী এই ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপের ঠিক আগে দুই দুইবার ডোপ টেস্টে পজেটিভ প্রমাণিত হয়েছেন। ফলে এক রকম বাধ্য হয়েই তাকে বাইরে রেখে মাঠে নামতে হবে ইংলিশদের। অ্যালেক্স হেলসের অভাব অবশ্য অপূরণীয় থাকার আশঙ্কা খুবই কম!

একটা তথ্য দিয়ে রাখা ভালো, শেষ দুই বিশ্বকাপ জিতেছে স্বাগতিক দল।  ২০১১ সালে ভারত, ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া।  এবার কি তাহলে সিংহের ঘরেই যাবে বিশ্বকাপের মুকুট!

ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্কোয়াড: ইয়ন মরগ্যান (অধিনায়ক), জ্যাসন রয়, জো রুট, বেন স্টোকস, মঈন আলি, জো ডেনলি, ক্রিস ওকস, টম কারেন, ডেভিড উইলি, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, লিয়াম প্লাঙ্কেট, আদিল রশিদ ও মার্ক উড।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ মে ২০১৯/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়