ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১৯ তম বর্ষপূর্তি : সংকট কাটিয়ে আশাবাদের পথে

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ২ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৯ তম বর্ষপূর্তি : সংকট কাটিয়ে আশাবাদের পথে

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : আজ ২ ডিসেম্বর। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ১৯তম বর্ষপূর্তি।

 

১৯৯৭ সালের এ দিনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির পর দীর্ঘদিনের অবরুদ্ধ পার্বত্যাঞ্চল বিশ্ববাসীর কাছে মুক্ত হয়। শান্তির বার্তা নিয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।

 

প্রাথমিকভাবে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সরকারও তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। সাময়িকভাবে পাহাড়ে রক্তের খেলা, অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হয়। কিন্তু বছর যেতে না যেতে প্রতিষ্ঠা হয় চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

 

এরপর শুরু হয় পাহাড়ে দুই আঞ্চলিক দলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। থেমে থেমে চলে দুই সংগঠনের হত্যা পাল্টা হত্যা। ২০০১ সালে তিন বিদেশি অপহরণের মাধ্যমে শুরু হয় পাহাড়ে অপহরণ বাণিজ্য। পরে ২০০৭ সালে জনসংহতি সমিতি থেকে বের হয়ে সৃষ্টি হয় আরেকটি আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস (এমএন লারমা)। এরপর বিভিন্ন সময় তিন পক্ষের কর্মী, সমর্থক হত্যার মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চলে পাহাড়ে।

 

চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের সঙ্গে জনসংহতি সমিতির দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তবে এতো বছর পর এসে ভূমি কমিশন কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সরকারের প্রতি জনসংহতি সমিতির আস্থা বেড়েছে।

 

গত বছর ১৮ তম বর্ষপূর্তি পর্যন্ত চুক্তির ধারা বাস্তবায়নসহ মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে জনসংহতি সমিতি আন্দোলন, সংগ্রাম চালিয়ে যায়। চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে জনসংহতি সমিতি গত বছর বর্ষপূর্তিতে রাঙামাটিতে স্মরণকালের সবচে বড় সমাবেশ করে।

 

সমাবেশে ১০ দফা দাবিসহ অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। কিন্তু ১৯তম বর্ষপূর্তিতে এসে ভূমি কমিশনের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে চুক্তির লিখিত-অলিখিত ধারাসমূহের মধ্যে জেএসএসের অন্যতম দাবি ছিল ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন কার্যকর করা।

 

২০০১ সালে ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন আইন পাস হলেও তা প্রত্যাখ্যান করে এর সংশোধনীর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আন্দোলন করে। পরবর্তীতে এ বছর ৬ অক্টোবর সংশোধনী সংসদে পাস হয়। এরপর ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ইতোমধ্যে কমিশনের দুটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। আর এই কমিশন কাজ শুরুর পর বাঙালি সংগঠনগুলোর মধ্যে বাঙালিদের উচ্ছেদ হওয়ার আশংকার কথা জানায়। ফলে বিভিন্ন সময় তারা হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচিও পালন করে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবছার আলী বলেন, গত ১৯ বছর ধরে আমরা চুক্তির বিরোধিতা করে আসছি। চুক্তির অন্যতম ধারা ছিল ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের মাধ্যমে জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সম্প্রতি তীব্র আন্দোলনের মধ্যেও সরকার এটি সংসদে পাস করেছে। এই কমিশনের মাধ্যমে পার্বত্যাঞ্চল থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদের আশংকা রয়েছে। কমিশনের আইনটি দ্রুত বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

 

তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ বেগম চিনু বলেন, শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ের অশান্ত পরিবেশ শান্ত হয়ে আসে। ইতোমধ্যে চুক্তির সিংহভাগই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ভূমি কমিশনের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন চুক্তি করেছেন, চুক্তি তিনি বাস্তবায়ন করবেন। তবে এর জন্য ধৈর্য ধরতে হবে।

 

বাঙালি সংগঠনগুলোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই কমিশনের কার্যক্রমের ফলে কাউকেই ভিটে-মাটি হারাতে হবে না। বরং যে ভূমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে সেই ভূমির মালিকানা পরিবর্তন হলেও ক্ষতিগ্রস্তকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হবে। কোনো মতেই কাউকে পার্বত্যাঞ্চল থেকে চলে যেতে হবে না।

 

রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ভূমি কমিশনের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের বিষয়েও সর্তক থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

 

ভূমি কমিশন কার্যকরে চুক্তি বাস্তবায়নে যে বাধা তা দূর হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবায়ন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যাবে না বাধা দূর হয়েছে। তবে ভূমি কমিশন কার্যকর হওয়ায় আমরা আশাবাদী বাকি কাজগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

 

গত বুধবার ৩০ নভেম্বর) রাঙামাটিতে এক গণসংবর্ধনায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এই সরকারই চুক্তি করেছে এবং এই সরকারই চুক্তি বাস্তবায়ন করবে। কোনো সমস্যা থাকলে টেবিলে বসে সমাধান করা হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২ ডিসেম্বর ২০১৬/রেজাউল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়