ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মাইকেল জ্যাকসন বিস্ময়কর এক পপ শিল্পী

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ২৫ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাইকেল জ্যাকসন বিস্ময়কর এক পপ শিল্পী

রুহুল আমিন : মাইকেল জ্যাকসন। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় `পপ কিং`। বিশ্বের আনাচে-কানাচে তার শ্রোতা রয়েছে। মৃত্যুর আট বছর পরও বিশ্বব্যাপী এখনো তার গান সমান জনপ্রিয়। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী তিনি।

মাইকেল জ্যাকসন একাধারে সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, গান লেখক, অভিনেতা, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী । মার্কিন এই সঙ্গীতশিল্পীর আটতম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের ২৫ জুন তিনি মারা যান। এই দিনে তার প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তার পুরো নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট তিনি জন্ম নেন। বাবা জোসেফ ওয়াল্টার জ্যাকসন ও মা ক্যাথরিন জ্যাকসন। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের সবাই কোনো না কোনো সময় পেশাগতভাবে সংগীতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

১৯৬৩ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মাইকেল জ্যাকসন পেশাদার সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। গায়ক হিসেবে জ্যাকসনের উত্থান কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই। তিনি তখন জ্যাকসন ফাইভ নামের সঙ্গীত গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে গান গাইতেন।

১৯৭১ সাল থেকে মাইকেল একক শিল্পী হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। মাইকেলের গাওয়া পাঁচটি সঙ্গীত অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত রেকডের্র মধ্যে রয়েছে। সেগুলো হলো- অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) ও হিস্টরি (১৯৯৫)।

১৯৮০র দশকে মাইকেল জ্যাকসন সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী যিনি এমটিভিতে এত জনপ্রিয়তা পান। বলা হয়, তার গাওয়া গানের ভিডিওর মাধ্যমেই এমটিভির প্রসার ঘটেছিলো। গানের তালে তালে মাইকেলের নাচের কৌশলগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। মাইকেলের জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রবোট, ও মুনওয়াক (চাঁদে হাঁটা) রয়েছে। মুনওয়াক আসলে হলো সামনের দিকে হাঁটার দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করে পিছনে যাবার ভঙ্গিমা। এখনও সারা বিশ্বের খ্যাত নৃত্যশিল্পীদের কাছে মাইকেল জ্যাকসনকে  শ্রদ্ধা কুড়ান।

মাইকেল জ্যাকসন দুবার রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেইমে নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনিই এই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যিনি গান লেখক, নাচের (সর্বপ্রথম এবং একমাত্র), ‘আর এন বি’ হল অব ফেইমে জায়গা করে নিয়েছেন। সঙ্গীত জগতের কেউ এত ক্যাটাগরিতে হল অব ফেইমে নিজেকে নিতে পারেননি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে মাইকেল সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী। ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার, ১৩টি ১নম্বর একক সঙ্গীত, এবং ১০০ কোটিরও বেশি মাইকেলের অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে। এবং এখনো বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড তাকে বিশ্বরেকর্ডে  ভূষিত করেছে বিনোদন জগতের মানুষ হিসেবে সবচেয়ে বেশি দান খয়রাত করার জন্যে এবং তার দানকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এর বেশি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নানা কেলেঙ্কারিতে(যা পরবর্তিতে প্রত্যেকটি ভুল প্রমাণিত হয়) জড়ালেও প্রায় ৪০ বছর ধরে সারা বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে ছিলেন এবং তিনি পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গায়ক এবং নৃত্যশীল্পির সিংহাসনে বসে আছেন।

আরো চমকপদ তথ্য হলো মৃত্যুর পর সংগীতের ইতিহাসে জনপ্রিয়তার হিসাব-নিকাশ অনেকটাই বদলে দিয়েছেন মাইকেল জ্যাকসন। নিত্য নতুন গড়েছেন সব রেকর্ড। যে বছর তিনি মারা যান সে বছরই সর্বাধিক বিক্রীত অ্যালবামের শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হন জ্যাকসন। মৃত্যুর এক বছরের মাথায় কেবল আমেরিকাতেই তার অ্যালবাম বিক্রি হয় ৮.২ মিলিয়ন কপি। আর বিশ্বজুড়ে বিক্রি হয় ৩৫ মিলিয়ন।

এ ছাড়া মৃত্যুর পর তার গান ডাউনলোডের ইতিহাসেও রেকর্ড গড়েন `পপ কিং`। জ্যাকসনের মৃত্যুর পর তার নির্বাচিত গান নিয়ে প্রকাশিত তিনটি অ্যালবাম এত বেশি বিক্রি হয় যে, কোনো জনপ্রিয় শিল্পীর নতুন অ্যালবামও এত বিক্রি হয়নি। জ্যাকসনের চার-চারটি অ্যালবাম এক বছরে সর্বাধিক বিক্রীত সেরা বিশের তালিকায় জায়গা করে নেয়।

২০১৫ সাল পর্যন্ত জ্যাকসনের গানের পরিবেশক সংস্থা হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল সনি মিউজিক। কিন্তু পপ কিংয়ের মৃত্যুর পর তার গানের বিক্রি ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় ২০১০ সালে জ্যাকসন এস্টেটের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করে সনি মিউজিক। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৭ সাল পর্যন্ত জ্যাকসনের গানের স্বত্ব কিনে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

২০১০ সালের নভেম্বরে জ্যাকসনের অপ্রকাশিত গান নিয়ে `মাইকেল` শিরোনামের অ্যালবাম প্রকাশের ঘোষণা দেয় সনি মিউজিক। অ্যালবামটি মুক্তি পায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। এর গানগুলোতে জ্যাকসনের সঙ্গে আরো কন্ঠ দিয়েছিলেন একন, ফিফটি সেন্ট প্রমুখ। এই অ্যালবামের জন্য জ্যাকসন এস্টেটের সঙ্গে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে সনি মিউজিক। একক কোনো গায়কের সঙ্গে সবচেয়ে ব্যয়বহুল চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয় এটি।

এই কিংবদন্তীকে নিয়ে ঘটনার শেষ নেই। ২০০৫ সালে চাঁদে ১২০০ একরের প্লট কিনেছিলেন `পপ কিং` মাইকেল জ্যাকসন। তার মৃত্যুর পর চাঁদের একটি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের নাম পরিবর্তন করে `মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন` রাখা হয়। জ্যাকসনকে সম্মান জানাতেই এমনটা করেছিল দ্য লুনার রিপাবলিক সোসাইটি।

কিছু সময় বিরতির পর ২০০৯ সালের মার্চে মঞ্চে ফেরার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনে। যদিও তিনি  আগের মতো ‘পারফর্ম’ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। তার পারফর্ম দেখার জন্য ‘দিস ইজ ইট’ নামের শো’র  টিকিট কেনার ‘ক্রেজ’ প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যায়। লন্ডনে প্রথম শো করার ঠিক ১৮দিন আগেই সারা বিশ্বে তার মৃত্যুর সংবাদ  ছড়িয়ে পড়ে। দায়িত্বে খামখেয়ালি করার কারণে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী মার্কিন চিকিৎসক ড. কনরাড মারেকে চার বছরের জন্য কারাবাস সাজা দেওয়া হয়েছিল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুন ২০১৭/রুহুল/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়