ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভয় পেয়ে স্বীকার করেছিলাম সব কথা: অপু বিশ্বাস

অপু বিশ্বাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২৭ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভয় পেয়ে স্বীকার করেছিলাম সব কথা: অপু বিশ্বাস

নাচের সঙ্গে তার প্রথম প্রেম। সেই প্রেমের প্রথম প্রাপ্তি সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ। ২০০৫ সাল। মুক্তি পেল আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’। কিন্তু  নায়িকাখ্যাতি এ সিনেমায় পেলেন না। বছর ঘুরতেই মুক্তি পেল ‘কোটি টাকার কাবিন’। তার বিপরীতে নায়ক শাকিব খান। ব্যস, এই এক সিনেমাতেই খুলে গেল সিসেম দুয়ার। চলচ্চিত্রে তখন ক্রান্তিকাল। সেই কালে একের পর পর ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয় করে রাতারাতি দর্শক মনে জায়গা করে নিলেন তিনি। মান্না, নিরব, ইমন, অমিত, মারুফ, সম্রাটের বিপরীতে অভিনয় করলেও জুটি গড়ে উঠল একজনের সঙ্গেই। তিনি শাকিব খান। পর্দার ন্যায় অপু বিশ্বাসের ব্যক্তি জীবনের নায়কও এখন শাকিব খান। এই দম্পতি বিয়ের সংবাদ গোপন রেখেছিলেন দীর্ঘ আট বছর। প্রেম, ধর্মান্তরিত হওয়া, বিয়ে, মাতৃত্বের স্বাদ, সংসারের হাঁড়ির খবর নিয়ে অপু বিশ্বাসের বয়ানে রাহাত সাইফুলের অনুলিখনে পড়ুন এই আয়োজনের দ্বিতীয় কিস্তি।

প্রথম পর্ব পড়ুন :  ‘পুরোহিত শাকিবকে বললেন, তুমি অপুকে সিঁদুর পরিয়ে দাও’

আমার মেয়েবেলা কেটেছে বগুড়া শহরে সাতমাথা; কাকনার পাড়া। কলেজে বেশিদিন রান করতে পারিনি। বগুড়ার এসওএস হারম্যান মেইনারে লেখাপড়ায় হাতে খড়ি। এরপর ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করলাম। স্বপ্ন ছিল উকিল হবো। অথচ সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে ভর্তি হলাম বিজ্ঞান শাখায়।

কাকা, বাবা, আমি, মা আর চার ভাইবোন নিয়ে আমাদের পরিবার। সেই সংখ্যা এখন এসে দাঁড়িয়েছে তিনে- আমি মা এবং দাদা। আমার দুই বোন দুই জায়গায় চলে গিয়েছে। অর্থাৎ বিয়ের পর এক বোন শিলিগুড়ি, অন্যজন রাজশাহী থাকে। আমি সবার ছোট। সবার বড় দাদা। আমি বেশি ভালোবাসতাম আমার কাকা বিশ্বনাথ বিশ্বাসকে। বন্ধু বলুন, বাবা-মা, ভাইবোন- আমার সব কিছুই ছিলেন তিনি। তাকে আমি ভীষণ মিস করি। মজার ব্যাপার বাড়িতে আমাকে বেশ কয়েকটি পিকুলিয়ার নামে ডাকা হতো। কাকা ডাকতেন ‘দুধ বুড়ি’। মা-বাবা ডাকতেন ‘মানি’, ভাই-বোনেরা ডাকতো ‘বুনো’ নামে।

ছোটবেলায় স্কুল থেকে বার্ষিক বনভোজনে যেতাম। একটু গ্রামের দিকে স্যারেরা নিয়ে যেতেন। তখন আমরা বন্ধুরা মিলে কি যে দুষ্টুমি করতাম! এই মুহূর্তে মনে পড়ছে শসা চুরি করে খাওয়ার কথা। আরেকটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। বাড়িতে মা মুরগি পালতেন। তখন আমাদের বাড়িতে অন্য বাড়ির মুরগিও আসতো। একদিন মনে হলো, অন্যের মুরগি খেতে কেমন লাগে দেখতে হবে। পরিকল্পনা করলাম বান্ধবী বৃষ্টিকে নিয়ে। পরিকল্পনা মোতাবেক একদিন একটি মুরগি ধরে খেয়ে ফেললাম। রাতে যাদের মুরগি তারা খুঁজতে এসেছে। আমি তো ভাব করলাম এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। কিন্তু মা’র চোখ ফাঁকি দিতে পরলাম না। মা কথা বের করার জন্য বলল, মুরগি চুরি করে খেয়ে থাকলে বলে দাও, নইলে বড় বিপদ হবে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। সেদিন ভয় পেয়ে স্বীকার করেছিলাম সব কথা। মা পরে ওদের মুরগি দিয়ে দিতে চেয়েছিল, ওরা নেয়নি। ইস্ সেইসব দিন আর কখনও ফিরে আসবে না।

ছোটবেলা থেকেই আমি একটু কালচারাল মাইন্ডের। নাচ খুব ভালোবাসতাম। তাই নাচ শিখেছি। তখন থেকেই এলাকার স্কুল-কলেজের যে কোনো অনুষ্ঠানে আমার পাক পড়ত। আমি নাচতাম। তখনও ‘নায়িকা হবো’ এমন চিন্তা আমার মাথায় আসেনি। ২০০৫ সালে আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। তখন বান্ধবীদের ইচ্ছায় লাক্স ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম। বান্ধবীরাই ব্যবস্থা করল। ওরা টিফিনের টাকা দিয়ে স্কুলের সামনের একটি স্টুডিও থেকে ছবি তোলার ব্যবস্থা করেছিল। এরপর লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সে কথা ভুলেও গিয়েছিলাম। যদিও পরে রিপ্লাই এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার এক মামা এসে বললেন, তুই কিছু ছবি তুলেছিস আমি দেখেছি। শাবনূরের বান্ধবীর চরিত্রে একটা মেয়ে লাগবে। তুই কাজ করবি?

মামার কথা শুনে আমি তো ভীষণ একসাইটেড! শাবনূর আপুকে বাস্তবে দেখবো এবং তার সঙ্গে আমি কাজ করবো! বিশেষ করে আম্মুর আমজাদ আঙ্কেলকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র কারণে। যে কারণে মা এবং আমি রাজি হয়ে যাই। আমজাদ আঙ্কেল তখন ‘কাল সকালে’ বানাচ্ছিলেন। এটিই আমার প্রথম সিনেমা। এখানে আমি কোনো পারিশ্রমিক নেইনি। এর পরে আমি আবার বগুড়া চলে যাই। সিনেমার সঙ্গে তখনও আমার প্রেম হয়নি। প্রেম হয়েছিলো আমার নাচের সঙ্গে। আমি দেখেছি সিনেমার মধ্যে নাচ রয়েছে, এভাবে সিনেমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি।

বগুড়া ফিরে পড়াশোনায় মনোযোগী হলাম। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। ফলে সিনেমা নিয়ে আমার আর মাথা ব্যথা ছিলো না। কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। একদিন পরিচালক এফ আই মানিক ভাইয়ের ফোন পেলাম। তিনি ‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমার জন্য নতুন নায়িকার খোঁজ করছিলেন। তিনি যখন আমাকে প্রস্তাব দিলেন আমি জানতে চেয়েছিলাম নাচ আছে কিনা? যখন জানলাম নাচ আছে তখন একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। ডিপজল ভাইয়ের প্রযোজনায় এটি নির্মিত হয়। নায়ক শাকিব খান। ডিপজল ভাই আমাকে বলেছিলেন, আমি নাম চেঞ্জ করবো কিনা? আমি বলেছিলাম, দাদুর দেয়া নাম চেঞ্জ করবো না। এরপর ‘অপু’ নামেই সিনেমাটির কাজ শেষ করি।

ডিপজল ভাই যখন দেখলেন ‘কোটি টাকার কাবিন’ হিট, তখন আমাকে বললেন, তোমাকে দিয়ে আমি আরো চারটা সিনেমা করবো। প্রত্যেক সিনেমার জন্য সম্মানী এক লাখ টাকা। যখন দেখলাম এতটুকু বয়সেই লাখ টাকা আয় করতে পারছি তখন ভালোই লেগেছে। নিজে উপার্জন করলে স্বাধীনভাবে চলা যায়, এ ভাবনাও তখন আমার মধ্যে কাজ করেছিল। এরপর থেকেই আমি চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করতে থাকি।

(পরবর্তী কিস্তিতে পড়ুন যেভাবে শাকিবের সঙ্গে অপুর বিয়ে)

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুন ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়