ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সালমান শাহ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল: মোস্তাক

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৯, ৮ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সালমান শাহ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল: মোস্তাক

সালমান শাহ

রাহাত সাইফুল : প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। লাশ উদ্ধারের পর ধারণা করা হয় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু পরিবারের দাবি, তাকে খুন করা হয়েছে। তার মৃত্যু নিয়ে এই রহস্যের জট দুই দশক পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত খোলেনি।

সালমান শাহের পরিবারের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা ও সামিরার বর্তমান স্বামী মোস্তাক ওয়াইজ। তিনি সালমান শাহের বাল্যবন্ধুও। সালমানের মৃত্যুর তিন বছর পর মোস্তাক ওয়াইজ বিয়ে করেন সামিরাকে। সালমান শাহের মৃত্যু নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেননি সামিরা ও তার স্বামী মোস্তাক।

কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই দম্পতি বর্তমানে থাইল্যাণ্ডে অবস্থান করছেন। কিন্তু থাইল্যান্ড নয়, সামিরা ও তার স্বামী বর্তমানে বাংলাদেশেই বাস করছেন। রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সরাসরি কথা হয় মোস্তাক ওয়াইজের। কথপোকথনের বিশেষ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

রাইজিংবিডি : সালমান শাহের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
মোস্তাক :
আমি ওদের বাসায় যেতাম। প্রতিদিন আমরা একসঙ্গে খেলতাম, আড্ডা দিতাম।

রাইজিংবিডি : সালমান শাহের মৃত্যুর সময় আপনি কোথায় ছিলেন?
মোস্তাক :
ইমন (সালমান শাহের ডাক নাম ইমন) যেদিন মারা যায় সেদিন শুক্রবার ছিল। আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু বৃহস্পতিবার ঘোরাঘুরি করে রাতে উত্তরায় আমাদের বাসায় ছিলাম। এরপর আমাকে এক ডাক্তার বন্ধু ফোন করে বলে ইমন আত্মহত্যা করেছে। ওর বাসাও ইস্কাটনে ছিল। আমি এ বিষয়টি আমার মা-বাবাকে জানাই। তখন জুমার নামাজের সময় হয়ে গিয়েছিল। এরপর তড়িঘড়ি করে বাসা থেকে চলে আসি ইস্কাটন প্লাজায়। তখন ইস্কাটন প্লাজা পুলিশ সিলগালা করে রেখেছিল। আমরা সে সময় সালমানের মৃতদেহ দেখতে পারিনি।

আমরা বিকেল ৩টার দিকে এফডিসিতে জানাজা পড়তে গিয়েছিলাম। সেদিন ইমনের বাবা আমাদের সকল বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘বাবা, ইমন এটা কি করল!’
 

মোস্তাক ওয়াইজ ও সামিরা


রাইজিংবিডি : সালমান শাহ কী কখনো আপনাদের কাছে আত্মহত্যার বিষয় শেয়ার করেছিল?
মোস্তাক :
পারিবারিক কারণে সালমান শাহ কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল। ইমনের পরিবারের বিষয় ঘাটলেই জানতে পারবেন। তবে কী কারণে সে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল তা আমি বলতে চাই না। সে কয়েকবারই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। ইমন তার বাবা-মায়ের ঝগড়ার কারণে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল- এটা বলতে চাই না। ইমনের বাবা কখনই বলেননি এটা হত্যা। উনি একজন ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট।

রাইজিংবিডি : আপনার ও সামিরার বিয়েটা কীভাবে হয়?
মোস্তাক :
পারিবারিকভাবে প্রস্তাবের মাধ্যমে আমাদের বিয়ে হয়। ১৯৯৯ সালে আমার বাবা এবং ২০১০ সালে আমার মা ইন্তেকাল করেন। ১৯৯৮ সালে আমার পরিবার বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং ১৯৯৯ সালে আমাদের বিয়ে হয়। আমার পরিবার সম্মানের সঙ্গে আদর করে সামিরাকে বউ করে নিয়ে আসেন। এখন যারা আমার পরিবারে আছেন সবাই সামিরাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মাথায় তুলে রাখেন। সামিরা সেই ধরনেরই বউ, সেই ধরনেরই মেয়ে। তার মধ্যে যদি কোনো ধরনের গলদ থাকত তা হলে আমার পরিবার তাকে মেনে নিত না। আমরা ১৮ বছর ধরে সংসার করছি।

রাইজিংবিডি : গত ৬ আগস্ট রুবি সুলতানা নামের একজন সালমান শাহের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
মোস্তাক :
এটা একটা বিচ্ছিন্ন বিষয়। হঠাৎ করেই আমার এক বন্ধু ফোন করে বলে, ফেসবুকে এ রকম একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। আমি তার কাছ থেকে লিংক নিয়ে ভিডিওটা দেখি। ভিডিওটা দেখে আমি অবাক হয়েছি। চিন্তা করলাম এটা কি ধরণের কথা! উনি ভিডিওটা লাইভ করেছেন। আর উনি সম্ভবত  আমেরিকায় আছেন। এটা উনি কেন করেছেন আমি তা জানি না। এটা উনি জানেন, আর আল্লাহ জানেন। এর পেছনে উনার যদি কোনো উদ্দেশ্য থেকে থাকে তবে তা অবশ্যই বের করা হোক। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরাও চাই এটা বের হোক। এটা যেভাবে ভাইরাল হয়ে গেছে, এতে আমার পুরো পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবাই আমাকে ও সামিরাকে গালমন্দ করছেন। এটা কোনোভাবে বন্ধ করতে পারব না। আমিতো বিষয়টি জনে জনে গিয়ে বোঝাতে পারব না। দর্শক এটা দেখবেন। আমরা আদালতের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। আদালত এর বিচার করবেন।

রুবি চৌধুরী কি বলছেন তাতে আমার কিছু আসে যায় না। দিন শেষে আমি জানি, আমার স্ত্রী জানেন, আল্লাহ তায়ালা জানেন। উনি যত যাই বলুন, এখানে আদালত আছে। আদালত যা বিচার করবেন আমি তা মেনে নেব। আর একটা বিষয় হচ্ছে- বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করেছে আমরা দেশের বাইরে থাকি, এ তথ্যটি ঠিক নয়।

রাইজিংবিডি : সালমান শাহকে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে মারা হয়েছে এবং তার ঘরে থাকা লাগেজে কিছু চেতনানাশক ঔষধও পাওয়া গিয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
মোস্তাক :
সিআইডির প্রতিবেদনেও এটা এসেছে। মজার বিষয় হলো- যখন ক্যামিক্যাল টেস্ট করার জন্য পাঠানো হয় তখন দেখা যায়, লোকাল অ্যানেসথেসিয়া। এটা চেতনানাশক ঔষধ নয়। নীলা চৌধুরী মিলাদের কথা বলে বাসার চাবি নিয়েছিলেন। তখন তারা সেখানে কি রেখে এসেছিলেন তা আমি জানি না। আমি কী বললাম, আর একজন কী বলেছে সেটা বড় কথা নয়। সত্যটা বের হয়ে আসুক।

রাইজিংবিডি : চলচ্চিত্রের অনেকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
মোস্তাক :
যখন এ ঘটনা ঘটেছে তখন খবর জানার একমাত্র মাধ্যম ছিল পত্রিকা এবং কিছু পাক্ষিক পত্রিকা। এর মাধ্যমে খবর জানতে পারি। ঘটনার পরই কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। তখন কিন্তু আমরা ইমন ও সামিরার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমারা বন্ধু মহল একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলাম, আমাদের কাছে কেউ কিছু জানতে চাইলে আমরা যেটা জানি সেটাই বলব। আমাদের কাছে সালমান শাহ অনেক প্রিয়, সে আমাদের কাছে ইমন। আমাদের প্রাণপ্রিয় ও জানের বন্ধু ইমন। আমার বন্ধুর খারাপ কিছু হবে, বন্ধুকে কাউকে মেরে ফেলবে তার বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হবো। এর বাইরে আমরা কোনো চিন্তা করতে পারিনি। তখন আমরা বলেছিলাম, পুলিশ আমাদের ডাকলে যা জানি তাই বলব। কিন্তু যখন পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ পায় তখন আমরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। নীলা চৌধুরী এবং তাদের গ্রুপ একেকবার একেকটা পয়েন্ট নিয়ে দোষারোপ করছেন। এবার বলছেন, গলা টিপে হত্যা করেছেন, একবার রিজভী, একবার আজিজ মোহাম্মদ ভাই, একবার ডনের নাম আসছে। পরবর্তী সময়ে সিআইডির প্রতিবেদনে জানা যায়, ইমনের ঘটনার দিন ডন নাকি বগুড়ায় ছিলেন। তার প্রমাণও নাকি সিআইডির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

রাইজিংবিডি : সামিরার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।
মোস্তাক :
আমার জানা মতে সামিরার আচরণ বা চরিত্রগত কোনোরকম সমস্যা ছিল না। কেউ যদি বলতে পারে সামিরার চরিত্র খারাপ আমি মাথা পেতে নেব।

 

আরো পড়ুন

# ‘সামিরার সঙ্গে পরকীয়ার প্রশ্নই আসে না’

সালমান শাহ’র মা বললেন হত্যায় জড়িতের নাম



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ আগস্ট ২০১৭/রাহাত/শান্ত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়