ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘বাসায় জানতেই পারেনি এতটা দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম’

প্রাণ রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বাসায় জানতেই পারেনি এতটা দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম’

প্রাণ রায় : আমার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট। শৈশব ওখানেই কেটেছে। আমরা পাঁচ বন্ধু ছিলাম। একবার পূজায় পরিকল্পনা করলাম একই রকম জামা তৈরি করব এবং সারাদিন একসঙ্গে ঘুরব। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী একই রঙের জামা বানালাম। পূজার সময় পাঁচ বন্ধু ঘুরতেও বের হলাম। আমাদের টার্গেট ছিল খুলনায় ঘুরতে যাওয়া। তখন খুলনা যাওয়াটা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো ছিল।

এদিকে বাসায় কাউকে বলিনি। তখন আমরা ক্লাশ ফাইভে পড়ি। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা ভালো ছিল না। খুলনা যেতে অনেক সময় লেগে যেত। এখন তো এক ঘণ্টা লাগে। যাই হোক খুলনা সারাদিন ঘুরে কোনো রকম বিপদ ছাড়াই ভালোভাবে বাড়ি ফিরে আসি। কিন্তু বাসায় জানতেই পারেনি আমরা এতটা দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।

প্রতিমা বিসর্জনের সময় এক ধরনের মজা ছিল। এ সময় অনেক নাচানাচি করতাম। পূজার সময় আরতি প্রতিযোগিতা হতো। আমি বরাবরই অংশ নিতাম। আর প্রতিবারই আমি তৃতীয় হতাম। কারণ নাচের সময় ধুপতি মুখে নিতে হয়। আমার বড় ভাই একবার নিয়েছিল। তখন সেখান থেকে আগুন ছিটকে এসে ওর নাক পুড়ে গিয়েছিল। এই ভয়ে আমি ধুপতি বেশিক্ষণ মুখে রাখতাম না। ভয় হতো যদি আমারও নাক পুড়ে যায়। এ কারণে প্রতিবার আরতি প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হতাম।

প্রতিমা তৈরির জন্য যেদিন থেকে মন্দিরে খড়-খোটা আনা শুরু হতো সেদিন থেকেই পূজার আনন্দ শুরু। পূজার আনন্দ মিশে থাকত পোশাক, খাবার, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে। বন্ধুরা মিলে রিকশা নিয়ে ঘুরতে বের হতাম। দুষ্টামিও করতাম। রিকশায় মেয়েদের পিছু নিতাম- এই আরকি! 

আর বাবা-মায়ের সঙ্গে বায়নাটা বরাবরই থাকত। এটা জামাকাপড় নিয়ে। আমাদের শপিং বলতে টেইলারিং শপ ছিল। আমি যখন ক্লাশ থ্রিতে পড়ি তখন একবার দুর্গা পূজার এক ঘটনা মনে পড়ছে। একবার টেইলারিংয়ের দোকানে আমার গায়ের মাপ নিয়ে এক কাস্টমার একটি সাফারি বানাতে দেয়। আমি মনে করি, এটা আমার জন্যই বানাতে দেওয়া হয়েছে। এরপর আমি প্রতিদিন ওই দোকানে যাই। যে সেলাই করছে তার সঙ্গে আলাপ করি, দেখি। এটা নিয়ে আমার মধ্যে এক ধরনের স্বপ্ন তৈরি হয়। কিন্তু পূজার আগের দিন রাতে ওই কাস্টমার যখন ড্রেসটা নিয়ে চলে গেল তারপর থেকেই আমি কাঁদতে শুরু করি। এরপর ওই রাতের মধ্যে একইভাবে আরেকটি জামা আমার জন্য তৈরি করে দেয়া হয়েছিল। আরেকবার বায়না ধরেছিলাম জাম্প কেডস কিনে দেওয়ার জন্য। ওই সময় জাম্প কেডসের খুব প্রচলন ছিল। এ নিয়েও খুব কেঁদেছিলাম। যদিও সর্বশেষ আমাকে জাম্প কেডস কিনে দেয়া হয়েছিল।

অনুলিখন : আমিনুল ইসলাম শান্ত



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়